* অভিজিৎ ঘোষ*
*****************
টাউন বড়দোয়ালি বিধানসভা কেন্দ্রটি রাজ্য রাজনীতির হেভিওয়েট ‘আসন’গুলির অন্যতম।
টাউন বড়দোয়ালি বিধানসভা কেন্দ্রটি’র সঙ্গে রাজ্যের ক্ষমতার ‘মানদণ্ডে’র একটা সম্পর্ক রয়েছে। এই কেন্দ্রের ভোটারদের ভোটে জয়ী হওয়া রাজনীতিকের কাছেই চার বছরের জন্য ছিলো ‘ক্ষমতার মানদণ্ড’। অর্থাৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রয়াত সুধীর রঞ্জন মজুমদার।

১৯৮৮ সালে সুধীর রঞ্জন মজুমদার বড়দোয়ালি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছিলেন। বড়দোয়ালির মানুষ রাজ্যকে প্রথম বার উপহার দিয়েছিল ” মুখ্যমন্ত্রী”।

১৯৮৮-র পর ২০২২। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর আবার নিজ কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রীকে পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে টাউন বড়দোয়ালির প্রতিটি ভোটার। তারা ৩৪ বছরের খরা কাটিয়ে এখন আবার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার দিতে চাইছে। তার মানে উপভোটে বিজেপি প্রার্থী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহার নিশ্চিত জয় চাইছে এই কেন্দ্রের ভোটাররা।
রাজ্য রাজনীতির তথ্য বলছে, ১৯৭৭ সালে টাউন বড়দোয়ালি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্ম। এই আসনের প্রথম নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলো বামফ্রন্ট মনোনীত ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী ডা: ব্রজগোপাল রায়। তিনি পেয়েছিলেন ৭৮০০ ভোট। এই নির্বাচনে বড়দোয়ালি কেন্দ্রে দ্বিতীয় হয়েছিলেন জনতা পার্টির প্রার্থী দ্বিজেন দেব।তিনি পেয়েছিলেন ৫৭৬৭ ভোট।

ভোট জয়ে আত্ম বিশ্বাসী মুখ্যমন্ত্রী।

এরপরই বড়দোয়ালি বিধানসভা কেন্দ্রটি কংগ্রেসের দুর্গ হয়ে উঠে। ১৯৮৩-র বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হন কংগ্রেস প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। ৮৮-র বিধান সভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে কংগ্রেস-টিইউজেএস জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সুধীর রঞ্জন মজুমদার।
১৯৯৩-র ভোটে ফের বড়দোয়ালি কেন্দ্রটি ছিনিয়ে নেয় বামেরা। জয়ী হন বামফ্রন্ট মনোনীত ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী ব্রজগোপাল রায়।
এরপর ফের বড়দোয়ালিতে অবামদের দাপট বেড়ে যায়। ১৯৯৮ এবং ২০০৩ সালে পর পর এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন কংগ্রেস প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। কিন্তু কংগ্রেস ক্ষমতায় আসেনি।তাই কংগ্রেস প্রার্থীকে জয়ী করেও কোনো সুবিধা পায়নি টাউন বড়দোয়ালির ভোটাররা। ২০০৮ সালে এই কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে লড়াই করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুধীর রঞ্জন মজুমদার। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে দুই হাত ভরে ভোট দিয়ে জয়ী করেছিলেন। কিন্তু সমস্যা সেই তিমিরেই। ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ কংগ্রেস। নির্বাচনের এক বছরের মধ্যেই প্রয়াত হয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুধীর রঞ্জন মজুমদার।
২০০৯-র উপ ভোটে কংগ্রেস নেতা আশীষ কুমার সাহা জয়ী হন বড়দোয়ালি কেন্দ্র থেকে।তারপর ২০১৩-র বিধানসভা নির্বাচনের মানুষ আশীষ সাহাকে জয়ী করে ভোট দিয়ে। এবার সরকার গড়তে ব্যর্থ হয় কংগ্রেস।
২০১৬- সালে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আশীষ সাহা যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। পরে ১৮-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে আশীষ সাহা যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। নির্বাচনে পদ্মচিহ্নে দাঁড়িয়ে আশীষ কুমার সাহা পেয়েছিলেন রেকর্ড সংখ্যক ভোট। ভোটের সংখ্যা ছিলো ২৪,২৯৩। শতাংশের হিসাবে ৬১.৯৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে পেয়েছিলেন ৫৭.৪৫ শতাংশ ভোট। মোট ভোট ছিলো ২২,৪৭৪টি।
বড়দোয়ালি বিধানসভা কেন্দ্রে বামেরা জয়ী হয়েছিলো মাত্র দুই বার।১৯৭৭ ও ১৯৯৩ সালে। এই সময়ে বড়দোয়ালি বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষ শাসকের বিধায়ককে পেয়েছিলো। এরপর ১৯৯৮ থেকে ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত “শাসক গোষ্ঠী”র বিধায়ককে পায় নি টাউন বড়দোয়ালির ভোটাররা। কিন্তু প্রতিটি নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে এই আশা বুকে বেঁধে ভোট দিয়ে কংগ্রেস প্রার্থীকে জয়ী করেছিলো। তাতে অবশ্যই খুব বেশি লাভ হয়নি।কারণ ক্ষমতার অলিন্দে আসতে পারেনি কংগ্রেস।
২০১৮ সালে পদ্ম শিবিরে আসা আশীষ সাহাকে বড়দোয়ালীর মানুষ ভোট দিয়ে জয়ী করে বিধানসভায় পাঠায়। তখনই বাঁধে বিপত্তি। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সঙ্গে আশীষ সাহা বনিবনা ছিলো না।তাই “শাসক বিধায়কে”র অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় ভোটাররা।

মুখ্যমন্ত্রীর ভোট প্রার্থনা।

আশীষ সাহা বিজেপি ছেড়ে দিয়ে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। তাই বড়দোয়ালি কেন্দ্রে হতে চলেছে উপ ভোট। এই ভোটে বিজেপি’র প্রার্থী খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস আগের মতোই ক্ষমতাহীন। ২৩-র ভোটে কি হবে সেটা আলাদা বিষয়।কিন্তু বর্তমানে উপভোটে বড়দোয়ালির মানুষ ফের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার দিতে চাইছেন। এই সুযোগ তারা হাত ছাড়া করতে চাইছে না। তাই বড়দোয়ালি বিধানসভা কেন্দ্রে রেজাল্টের গতি প্রকৃতি কি হতে পারে, তার আভাস পাওয়া গেলো স্থানীয় ভোটারদের ধমনী-শিরা বিশ্লেষণ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *