ডেস্ক রিপোর্টার, ৭আগস্ট।।
বেনজির কাণ্ড রাজ্যের স্বপ্নের ডেন্টাল কলেজে।ঔষধ না খাইয়ে ফেলে দেওয়া হলো রোগিনীর দাঁত।তাও আবার আক্কেল দাঁতের পরিবর্তে ভালো,সুস্থ  দাঁত।দাঁতের যন্ত্রণায় এখন কাতর রোগিনী । রোগিনী  চাইলেন ক্ষতিপূরণ।তিনি চিঠি দিলেন আইজিএম- র সুপারকে।ঘটনার নেপথ্যে শিক্ষানবিশ ডাঃ ভাস্কর সরকার।ঘটনা খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।আইজিএমের ইতিহাসে এটাই কোনো রোগীর ক্ষতি পূরণ চাওয়ার প্রথম ঘটনা।
   অনামিকা শর্মা। বয়স ২৯। তিনি মোহনপুর রানীর বাজারের বাসিন্দা। গত ২৩ আগস্ট অনামিকা শর্মা দাতের যন্ত্রনা নিয়ে এসেছিলেন আইজিএম হাসপাতালে। তিনি গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা মানিক সাহার স্বপ্নের ডেন্টাল কলেজে। ডেন্টাল কলেজে প্রথমে তিনি যান অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার ডা: অন্বেষার কাছে। ডঃ অন্বেষা দেখেন অনামিকা শর্মার মূলত সমস্যা আক্কেল দাঁতের। তখন তিনি রোগিনী অনামিকাকে  রেফার করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে।  কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অনামিকাকে না দেখে, পাঠিয়ে দেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ভাস্কর সরকারের কাছে।


রোগীনী অনামিকা শর্মার স্বামী তরুন শর্মার অভিযোগ, চিকিৎসক ভাস্কর সরকার অনামিকাকে  কোন ঔষধ না খাইয়ে দাত ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। অনামিকাও বিষয়টি বুঝতে না পেরে চিকিৎসক ভাস্করের কথা মত রাজি হয়ে যান। আর তাতেই ঘোর বিপদ নেমে আসে অনামিকা শর্মার জীবনে। চিকিৎসক ভাস্কর মহিলার আক্কেল দাঁত না ফেলে বরং ভালো দাঁত ফেলে দেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ওঠেন।

।।প্রতীকী ছবি।।

মাড়ি ও দাঁত দিয়ে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে  অনামিকা শর্মা বাড়িতে চলে যান। কিন্তু কোন ভাবেই তার দাঁতের ব্যথা ও রক্তক্ষরণ কমে নি।পরের দিন তিনি চলে আসেন আইজিএম হাসপাতালে।বিষয়টি চিকিৎসকদের খুলে বলেন। তখন ডেন্টাল কলেজের অন্যান্য চিকিৎসকরা বিষয়টি জানতে পারেন। কিন্তু কেউ কোনো সুরাহা রাস্তা বের করতে পারেন নি। বরং শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ভাস্কর সরকার অসুস্থ মহিলা অনামিকা শর্মাকে নানান ভাবে হেনস্থা করেন।


রোগিণী অনামিকা শর্মার স্বামী তরুণ শর্মা জানিয়েছেন, অনামিকা গ্ল্যান্ডের সমস্যা নিয়ে গিয়েছিলেন আই জি এম হাসপাতালে। বহিঃ বিভাগ থেকে তাকে পাঠানো হয়েছিল ডেন্টাল কলেজে।সেখানে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তার ভালো দাত ফেলে দেয়। এটাই ছিলো ডেন্টাল কলেজের ভুল চিকিৎসার নিদর্শন।অনামিকার স্বামী জানিয়েছেন, ডেন্টাল কলেজের চিকিৎসদের ভুল চিকিৎসার কারণে তার স্ত্রীর ক্ষতি হয়েছে। তাই তিনি ক্ষতি পূরন দাবি করেছেন আইজিএমের সুপারের কাছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন রেসপন্স নেই।তরুণ শর্মার প্রশ্ন, চিকিৎসকরা এই ভাবে ভুল চিকিৎসা করেন।তাদের কি নেই নুন্যতম বোধ শক্তি?তাই ক্ষতি পূরণের দাবি করেছি।

।।চিকিৎসকের ব্যবস্থা পত্র।।

আইজিএম হাসপাতাল সূত্রের খবর, সুপার এই বিষয়টি জানার পর,তিনি সঙ্গে সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা করবেন  সুপারের কাছে।অবশ্যই তদন্ত কমিটির সমস্ত সদস্যরাই চিকিৎসা। সুতরাং তদন্ত কমিটিতে থাকা চিকিৎসকরা অভিযুক্ত চিকিৎসক ভাস্কর সরকারের বিরুদ্ধে কি রিপোর্ট জমা করবেন? সেইটা এখন দেখার বিষয়। কারণ, কোনো ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে যদি রোগীর মৃত্যু বা  শরীরের কোন অংশের বড় ক্ষতি হয়, তাহলে দোষী চিকিৎসকরা কি শাস্তি পান এই রাজ্যে?

।।ক্ষতিপূরণ চেয়ে সুপারকে দেওয়া রোগিনীর চিঠি।।

রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান দেখলেও তা স্পষ্ট হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত দোষী চিকিৎসকরা শাস্তি পেয়েছেন বলে কোনো তথ্য নেই। স্বাস্থ্য দপ্তরে দূরবীন দিয়েও খুঁজলেও এরকম আলামত পাওয়া যাবে না। রোগীরা কোনো কালেই সঠিক বিচার পায় নি। এখন ডেন্টাল কলেজের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ রোগিনী অনামিকা উপযুক্ত বিচার পাবে কনা সেটা সময়েই বলবে।


রাজ্যের নিষ্কলুষ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা একজন দন্ত চিকিৎসক। এই কারণেই মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি কাজ করবেন রাজ্যের দন্ত চিকিৎসার পরিষেবার উন্নয়নের ক্ষেত্রেও। তার জন্যই মুখ্যমন্ত্রী স্থাপন করেছেন স্বপ্নের ডেন্টাল কলেজ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বপ্নকে অঙ্কুরেই হত্যা করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে খোদ ডেন্টাল কলেজে। তার প্রথম ধাপ ডেন্টাল কলেজে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার নিয়োগ প্রক্রিয়া। ডেন্টাল কলেজ হওয়ার সুবাদে প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসারদের। অভিযোগ কোন নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করেই সিনিয়রদের বঞ্চিত করে জুনিয়র চিকিৎসকদের ডেন্টাল কলেজে নিয়োগ করা হচ্ছে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার হিসেবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার বহর কতটা?তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে রানির বাজারের বাসিন্দা অনামিকা শর্মার চিকিৎসা থেকেই।

ডেন্টাল  কলেজের চিকিৎসা ব্যবস্থাতে কতটা সমন্বয়ের অভাব। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্রের প্রথম পাতায় কোথায়ও লেখা নেই রোগিনী অনামিকা শর্মার দাত ফেলতে হবে। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা, ব্যবস্থাপত্রের পরবর্তী পৃষ্ঠাতেই লেখা রয়েছে রোগীনীর দাঁত ফেলে দেওয়া হয়েছে। এবং ওষধ না খাইয়েই। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ডেন্টাল কলেজের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এত বড় অসামঞ্জস্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাহলে চিকিৎসকরা কি রোগীদের নিয়ে বিলাসিতায় মত্ত থাকেন? উঠছে প্রশ্ন। কারণ সদ্য পাশ করা চিকিৎসকরা এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তারাই আবার চিকিৎসা করছেন রোগীদের। তাহলে হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা কোথায়? আসলে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র হলো  বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকরা  ব্যস্ত থাকেন তাদের প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে। যেখানে রোজগার করা যায় কারি কারি অর্থ। হাসপাতালে  তাদের চলন গমন নাম মাত্র। শুধু হাজিরার খাতায় স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য। এবং মোটা অঙ্কের মাসিক বেতন ধরে রাখাতে। এছাড়া আর কিছুই নয়। চিকিৎসকদের সম্পর্কে এরকম মন্তব্যই পোষণ করছেন রাজ্যের আমজনতা।


      জুনিয়র চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণে যখন রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন,  তখন তার দায়ভার নেওয়ার কোনো চিকিৎসককে খুঁজে পাওয়া যায় না। বাস্তব অর্থে মানুষ চিকিৎসকদের স্থান দেন ঈশ্বরের পরেই। আর চিকিৎসকরাও মানুষের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে রোগীদের গিনিপিগের মতই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। রোগীর শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি বা তাদের মৃত্যু কোনটাতেই চিকিৎসকদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারে না। তাদের কাছে অর্থই শেষ কথা। আর চিকিৎসা মানেই কর্পোরেট কায়দায় বাণিজ্য। তবে সমস্ত চিকিৎসকদের এক সারিতে রাখাটা ভুল হবে। বিবেকবান কিছু চিকিৎসক আছেন বলেই রোগীরা এখনও হাসপাতালে গিয়ে তাদের রোগ সারাতে পারেন।এবং কিছুটা হলেও ভরসা পান হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।


রাজ্য ডেন্টাল কলেজের তথ্য বলছে,  নব্য পাশ করা দন্ত চিকিৎসকরা দেশের বিভিন্ন কলেজ থেকে অভিজ্ঞতার জাল শংসাপত্র এনে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসারের চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছেন।স্বাভাবিক কারণেই তাদের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।  দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ডেন্টাল কলেজে থাকা এসিস্ট্যান্ট প্রফেসাররা এখনো রোগীদের প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র লিখতেই জানেন না। আর এই সমস্ত চিকিৎসকদের কাছ থেকে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার প্রত্যাশা করাটাও এক অলীক স্বপ্নের মতো।


রাজ্য ডেন্টাল কলেজে গুঞ্জন, অনেক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরই নাকি বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত কলেজ থেকেও অভিজ্ঞতার জাল সার্টিফিকেট এনে চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের এই ডেন্টাল কলেজ কালিমা লিপ্ত করতে পারে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেই। বলছেন রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র চিকিৎসকরা। কারণ, রাজ্যের ডেন্টাল কলেজের চিকিৎসার কদর্য চেহারা ইতিমধ্যেই চলে এসেছে প্রকাশ্যে। গোপনে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এটা কোনো গভীর ষড়যন্ত্র রচনার ইঙ্গিত না তো?

।।ডেন্টাল কলেজে মুখ্যমন্ত্রী।।

রাজ্যের নিষ্কলুষ মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহার স্বপ্নের ডেন্টাল কলেজে কিভাবে বেধেছে দুর্নীতিবাজদের বাসা? এটা অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীকেও জানা উচিত। রাজ্য ডেন্টাল কলেজে পা রাখলেই শোনা যায়, সমস্ত নস্টের মূলে রয়েছে ডেন্টাল সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর চিকিৎসক রাজেশ  আচার্য। অভিযোগ, রাজেশ আচার্য ডেন্টাল কলেজে গেরুয়া নামাবলী গায়ে দিয়ে দুর্নীতির রেকেট বিস্তার করেছেন।অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগ থেকে শুরু করে ডেন্টাল কলেজের বিভিন্ন মেশিনারিজ ও আসবাবপত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে বেরিয়ে আসছে দুর্নীতির বুদবুদ গন্ধ।  এই মুহূর্তে রাজেশ আচার্য স্বাস্থ্য দপ্তরের একজন গেরুয়া সৈনিক।

।।উপ-অধিকর্তা রাজেশ আচার্য্য।।

রাজ্যের সিনিয়র চিকিৎসকদের বক্তব্য, বাস্তব অর্থে ডা: রাজেশ আচার্য একজন বাম ক্যাডার। দীর্ঘ বাম জামানায় তিনি নিজেকে একজন কমরেড হিসেবে পরিচয় দিয়ে দপ্তরে ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন। অভিযোগ, স্বাস্থ্য দপ্তরে  ঘুরে ঘুরে তিনি চাঁদা সংগ্রহ করতেন তৎকালীন সময়ের মেলার মাঠের লালবাড়ি কর্তাদের জন্য। আর এখন তিনি মস্ত বড় গেরুয়া হনু।তাই ডেন্টাল কলেজে দুর্নীতির একছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন চিকিৎসক রাজেশ আচার্য। রীতিমতো তার কার্যকলাপে বিতশ্রদ্ধ রাজ্যের সিনিয়র চিকিৎসকরা। তারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও “জনতার মশাল”র  কাছে রাজেশ আচার্যের অনেক তথ্যই তুলে দিয়েছেন। এগুলি পর্যায় ক্রমে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে জনতার মশাল- এ। তখনই দুর্নীতিবাজ চিকিৎসকদের মুখ ও মুখোশ খসে পড়বে জন সন্মুখে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *