
ডেস্ক রিপোর্টার, ২৪নভেম্বর।।
এ কোন রাজ্য! ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে সন্তান বিক্রি! ত্রিপুরায় এখন চলছে সুশাসনের দ্বিতীয় কর্মযজ্ঞ। প্রশাসনিক ভাষায়, গোটা রাজ্যে ঘটেছে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন। সু-শাসনের কক্ষপথে চলা রাজ্যের আম জনতা বর্তমানে বাস করছেন উন্নত ত্রিপুরায়। তাহলে কেন ঘটবে সন্তান বিক্রির মত জঘন্য অপরাধ?
রাজ্যের বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন, এটা রাজ্যের বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার নিদর্শন। একই সুর জনজাতিদের।তাহলে, জনজাতিদের উন্নয়নের ফেরিওয়ালা প্রদ্যুৎ কিশোর ও তার এডিসির প্রশাসনও কোথায়? তাদের কি কোনো দায় – দায়িত্ত্ব নেই? রাজ্যের শাসক দল বিজেপির অভিযোগ,এডিসির উন্নয়নের নামে বরাদ্ধকৃত অর্থ যৌথ ভাবে লুটেপুটে খাচ্ছেন এমডিসি ও তিপ্রামথার নেতারা। কিন্তু সাধারণ অসহায় জনজাতিরা উদর পূর্তির তাগিদে বাধ্য হচ্ছে নিজের গর্ভজাত সন্তানকে
বিক্রি করতে।অথচ জনজাতিদের স্ব- ঘোষিত রাজা প্রদ্যুৎ কিশোরের কোনো হেলদোল নেই। রাজ্যের জনজাতি মহল্লাগুলিতে এই অবস্থার জন্য শুধুই কি রাজ্য সরকার? নাকি এডিসিতে পুরোপুরি ব্যর্থ তিপ্রামথা পরিচালিত সরকার? জনমনে চাগার দিচ্ছে এই সমস্ত প্রশ্ন।

রাজ্যে সুশাসনে শুধু কি জনজাতি মহল্লাতেই ঘটছে সন্তান বিক্রির ঘটনা? না, বাঙালি বসবাসকারী এলাকায় মানুষ অভাবের তাড়নায় শেষ পর্যন্ত আদরের দুধের সন্তানকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এরকম ঘটনার বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্তও রয়েছে।বাস্তব অর্থে পাহাড়ে জনজাতিদের উন্নয়নের কদর্য রূপ প্রকাশ্যে এসেছে তেলিয়ামুড়া মহকুমা’র মুঙ্গিয়াকামী আর.ডি ব্লকের হলুদিয়া এ.ডি.সি ভিলেজের বংশীপাড়া’তে।
বংশীপাড়া এলাকার বাসিন্দা খুকেন দেববর্মা। তার দিন আনতে পান্তা ফুরায়। জঙ্গলের লাকড়ি, সবজি বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ দিতে সংসার প্রতিপালন করেন।একদিন আগে তার স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয় ফুট ফুটে এক কন্যা সন্তান। আর তাতেই মাথায় বাজ পড়ে দিন দরিদ্র খুকেন দেববর্মার মাথায়। তিনি দেড় দিনের কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দেন, মাত্র ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে। শিশুটিকে কিনে নিয়েছেন প্রতিবেশী গ্রাম ছনপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুশীল দেববর্মা। বিষয়টি আঁচ করতে পারেন শিশুটির মা।
তখনই গর্ভজাত কন্যা সন্তানকে ফিরে পাবার জন্য অসহায় মা চঞ্চল হয়ে উঠেন। এবং গোটা ঘটনা গ্রামের লোকজনের কাছে খুলে বলেন।জানিয়েছেন, সন্তান বিক্রি করা পিতা খুকেনের দাদা।

স্থানীয় লোকজন ঘটনা অবগত করেন রাজ্যের উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মাকে। কারণ তিনি এই অঞ্চলের রাজনৈতিক অভিবাবক। তিনিই স্থানীয় বিধায়ক। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসনের উদ্যোগে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া কন্যা সন্তানটিকে তার মায়ের বিশ্বস্ত কোলে। মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা নিজেও স্বীকার করেছেন তার নির্বাচনী ক্ষেত্রে সন্তান বিক্রির ঘটনা।

এই ঘটনার পর দিকে দিকে প্রশ্ন উঠছে এ কেমন সুশাসন? যেখানে, অভাবের তাড়নায় সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানকে বিক্রি করে দিতে হয় একজন বাবাকে। আর খোদ এই দেশের প্রধানমন্ত্রীই কন্যাদের জন্য “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও” স্লোগান তুলছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই স্লোগানের স্বার্থকতারনছোঁয়া কতটা লেগেছে কৃষ্ণপুর বিধানসভার বংশীপাড়া এডিসি ভিলেজে? এই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর দেবে কে?
এই ঘটনার দিকে দিকে প্রশ্ন উঠছে এ কেমন বিকশিত রাজ্য ত্রিপুরা? এ কেমন এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা? যেখানে অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি করতে হয় একজন অভাবী পিতাকে।

তবে খুকেন দেববর্মা অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি করলেও এটা একটা বড় অপরাধ। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুটির বাবা তাকে বিক্রি করতে পেরেছেন ঠিকই,কিন্তু মা যে মা- ই হন। অভাবের মধ্যেও দিন দরিদ্র হতভাগী মা ঠিক তার কোলে ফিরিয়ে এনেছেন নিজের গর্ভজাত সন্তানটিকে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়ে নিরাপদে গা ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত পিতা খুঁকেন দেববর্মা।