ডেস্ক রিপোর্টার, ৮ফেব্রুয়ারি।।
             তিপ্রামথা সরকারে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাহাড়ে দলের সংগঠনে ভাটা পড়েছে। বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে। জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ প্রদ্যুৎ কিশোরের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছে না। কারণ সরকারে যোগ দেওয়া মানেই গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবি ফুড়ুৎ। এটা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন পাহাড়ের সাধারণ জনজাতি অংশের মানুষ। এতো দিন গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের ক্যাসেট বাজিয়ে প্রদ্যুৎ জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করেছিলেন। ভোট বাক্সে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল।প্রদ্যুৎ বারবার বলেছিলেন, ” তার দল ক্ষমতার লোভী নয়। জনজাতিদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে”। কিন্তু সরকারে যোগ দিয়ে প্রদ্যুৎ বুঝিয়ে দিয়েছেন তার এই সমস্ত কথার অন্তরালে ক্ষমতার আস্বাদন পোষে রেখেছিলেন মনের মনি কোঠরে। আইপিএফটির প্রয়াত নেতা এনসি দেববর্মা যে ভুল করেছিলেন, একই পথে হাঁটলেন প্রদ্যুৎ কিশোর।


ভারত সরকার ও রাজ্য সরকার এবং তিপ্রামথার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এই চুক্তির সারমর্ম এখনো স্পষ্ট নয় জনজাতি অংশের মানুষের কাছে। চুক্তির কয়েকদিনের মধ্যেই সরকারে যোগ দিলো মথা। প্রদ্যুৎ কিশোরের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোর ধোঁয়াশার মধ্যে জনজাতিরা। অন্তত এটা স্পস্ট, গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড আর হচ্ছে না। ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মধ্যে জনজাতিদের স্বার্থ সম্বলিত কি বিষয় আছে? এখনোও তা খোলসা করেন নি প্রদ্যুৎ। সবটাই ভাসা ভাসা।


প্রদ্যুৎ কিশোর জাতীয় স্তরের একটি সংবাদ মাধ্যমে ইন্টারভিউতে বলেছেন, “এখন তিনি চাইছেন তার ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম সহ সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্টগুলি মুছে ফেলতে।” অর্থাৎ প্রদ্যুৎ বুঝে গিয়েছেন, সরকারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তার জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে। জনজাতিদের কঠিন ও বাস্তবমুখী প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো তার কোনো সাহস নেই।
               বিজেপির সঙ্গে সরকারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত যে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না জনজাতিরা, তার প্রমাণ মিলেছে হাতে নাতে। বৃহস্পতি বার গোটা রাজ্যে তিপ্রামথা সাব-জোনাল ভিত্তিক ধন্যবাদ র‍্যালি বের করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট র‍্যালিগুলিতে লোক সংখ্যা ছিল হাতে গুনা। অথচ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক লগ্নে সাব-জোনাল ভিত্তিক মিছিল গুলিতে ছিলো লোকে লোকারণ্য। এখন এই চিত্র অতীত।


এদিন তিপ্রামথার সাব-জোনাল ভিত্তিক এক ধন্যবাদ র‍্যলি অনুষ্ঠিত হয় গোমতী জেলার গর্জিতে। র‍্যালিটি শুরু হয়েছিল পূর্ব গর্জি ছড়া এডিসি ভিলেজের গুরু-ভক্ত পাড়া স্কুল মাঠ থেকে। মিছিলটি গর্জি বাজার পরিক্রমা করে গর্জি সাবজোনাল মাঠে এসে মিলিত হয়। এখানে অনুষ্ঠিত হয় সভা।সভা পরিচালনা করেন মথার নেতা উৎপল জমাতিয়া। বক্তব্য রাখেন রাজকিশোর নোয়াতিয়া, গোলক সাধন জমাতিয়া,শঙ্খরাম নোয়াতিয়া।উপস্থিত লোকজন জানিয়েছেন, এই মিছিলে সর্বসাকুল্যে লোক হয় ১৩৫ জন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ উপস্থিত নেতাদের পরিবারের সদস্যরা ও ঘনিষ্ট লোকজন।

।।গর্জিতে মথার ছন্নহীন ধন্যবাদ মূলক মিছিল।।

সরকারে যোগ দেওয়ার পর ধন্যবাদ মূলক র‍ ্যালিতে তিপ্রামথার কর্মী – সমর্থকদের এই নগন্য উপস্থিতি প্রমাণ করে সাধারন জনজাতি অংশের লোকজনের মনে  কি চলছে? তারা বুবাগ্রার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না। আগামী দিনে পাহাড় রাজনীতিতে তিপ্রামথার জন্য ধেয়ে আসছে ঘোর বিপদ।


তিপ্রামথা সরকারে যোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানের মধ্যেই খয়েরপুরে ভাঙন ধরে দলে। মথার শিবির ছেড়ে শতাধিক ভোটার শামিল হয় বিজেপির পতাকার তলে। নবাগতদের হাতে গেরুয়া পতাকা তুলে দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক রতন চক্রবর্তী।


সব মিলিয়ে পাহাড়ের লোকজন প্রদ্যুৎ কিশোরকে বার্তা দিতে চলছেন, ” তারা বুবাগ্রার আসল চেহারা বুঝতে পেরে গেছেন।এখন তাদের মোহ কাটতে শুরু করেছে। তাই তারা মথার কাছ থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে মুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *