ডেস্ক রিপোর্টার, ১০নভেম্বর।।
রাজ্যে রাজনৈতিক সন্ত্রাসে আক্রান্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের যখন কলকাতায় উড়িয়ে নিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে,ঠিক তখনই স্বামীর চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যাওয়া এক সময়ের তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্যাকে নিরাশ করলো নেতৃত্ব। শেষ পর্যন্ত দলের নেতৃত্বের কোনো সাহায্য সহযোগিতা না পেয়ে ধার-দেনা করে পাঠানো টাকায় এম্বুলেন্স ভাড়া করে বাড়িতে নিয়ে আসছেন স্বামীর নিথর দেহ।উত্তর জেলার যুবরাজ নগরের বাসিন্দা রেহানা বেগম।এক সময় তিনি ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যা।কিন্তু রেহানা বেগম আশা করেছিলেন বিপদের দিনে তিনি পাশে পাবেন দলের নেতৃত্বকে।কিন্তু এই সৌভাগ্য কপালে জুটে নি। স্বামীর লাশ নিয়ে বসে থাকা খোদ রেহানা আক্ষেপ করেই একথা বলেন।তিনি এখনো তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী।
রেহানা বেগম জানিয়েছেন, সম্প্রতি তার স্বামী ফজলউদ্দীন অসুস্থ হয়ে পড়েন।উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে কলকাতায় রেফার করে।হত-দরিদ্র তৃণমূল নেত্রী অল্প কিছু টাকা ব্যবস্থা করে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে চলে যান কলকাতায়। স্বামীকে ভর্তি করান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালে ফজলউদ্দীনের বেড নম্বর ছিলো-২৪৪। রেহানার দাবি, স্বামী হাসপাতালে ভর্তি থাকা কালীন বাংলার বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।অনেকের সঙ্গে কথাও বলেন।কিন্তু কেউ তাকে সাহায্যের আশ্বাস দেননি।এমনকি কেউ হাসপাতালে এসে তার অসুস্থ স্বামীকে দেখেনও নি।
ভাগ্যের পরিহাস মঙ্গলবার সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেহেনা বেগমের স্বামীর মৃত্যু হয়। নুন আনতে পান্তা ফোরানোর মতো অবস্থায় থাকা রেহেনা বেগমের করে তার স্বামীর লাশ নিয়ে ত্রিপুরায় আসার টাকা পর্যন্ত নেই।তখন তিনি বিষয়টি বেশ কয়েকজন নেতাকে জানিয়েছেন।কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।কেউ দাঁড়ান নি তার পাশে। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কাছ থেকে একটি এম্বুলেন্স ভাড়া করেন স্বামীর মৃতদেহ বাড়িতে আনার জন্য।কিন্তু সহায় সম্বলহীন রেহানা কোথায় থেকে মিটাবে স্বামীর মৃতদেহ আনার কাজে ব্যবহৃত এম্বুলেন্সের ভাড়া? রেহানা বেগমের উত্তর, তার মাথা গোজার জায়গা, বাড়ির জমিটুকু বিক্রি করে এম্বুলেন্সের ভাড়ার টাকা মেটাবেন। বাড়ির জমি বিক্রির জন্য রেহেনা বেগম তার পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে দিয়েছেন।তারা দেখেছে খদ্দের।রেহেনার বক্তব্য, বুধবার রাতে বা বৃহস্পতিবার সকালে তিনি স্বামীর লাশ নিয়ে পৌঁছে যাবেন বাড়িতে।এবং স্বামীর মৃতদেহ কবরস্থ করেই মিটিয়ে দেবেন এম্বুলেন্সের টাকা।
পরিষ্কার ভাবে রেহানা বেগমের পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন, বাংলার তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে কি এটুকু সাহায্য আশা করতে পারে না রাজ্যের কর্মী-সমর্থকরা? তৃণমূল নেতৃত্ব কি শুধু ভোটের লড়াই করতে এসেছেন?এখানে কি কোনো মানবিকতার স্থান নেই?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *