*৭৭তম জনশিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে জিএমপি’র সমাবেশ।
* সমাবেশস্থল তেলিয়ামুড়ার চাকমাঘাট।
*প্রধান বক্তা রাজ্য সিপিআইএম’র সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী।
* পৌষের শীতের দুপুরে সভাস্থল ছিলো প্রায় জন শূন্য।
* এই চিত্র কি বামেদের প্রতি মানুষের বিমুখতা?না কি কোনো কোনো অজানা ভয়?
*অভিজিৎ ঘোষ*
******************
“ইতিহাসের শিক্ষা সদাই বড়ই যে নির্মম,
রাজা- মহা রাজাকে ফকির করে, সাজা দেয় চরম।
তবুও যদি শিখতে কিছু, হতে সর্বদাই নত।
অজ্ঞতা তোমার ভীষণ প্রিয়, ক্ষমতার পেয়েছো স্বাদ।
দম্ভ তোমার হারিয়ে যাবে একদিন , হয়ে যাবে কুপোকাত।”……ক্ষমতার দম্ভে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া মানুষ জনকে নিয়েই কবি কলম ধরেছিলেন।
কবির “মিছে ক্ষমতা” কবিতার এই কয়েকটি পংক্তির সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে রাজ্যে পূর্বতন শাসক দল তথা সিপিআইএমের। তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখা গেল তেলিয়ামুড়ার চাকমাঘাটে,সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর জনসভায়।৭৭তম জনশিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে জিএমপি’র আয়োজনে চাকমাঘাটে ছিলো সিপিআইএম’র সমাবেশ।এই সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জিতেন্দ্র চৌধুরী।
এক টানা দীর্ঘ ২৫বছর। মাঝে পাঁচ বছর বাদ দিলে ৩৫বছর রাজ্যের শাসন ক্ষমতার অলিন্দে ছিলো সিপিআইএম। রাজধানী আগরতলা থেকে গন্ডাছড়া মহকুমার রইস্যাবাড়ির প্রান্তিক অঞ্চল।এবং ধর্মনগর থেকে সাব্রুমের প্রান্তিক অঞ্চল।সবেতেই ফতফত করতো লাল পতাকা। লাল ব্যতীত অন্য কোনো পতাকার চিহ্ন ছিলো না। এক কথায় রাজ্য রাজনীতির দানবীয় শক্তি হয়ে উঠে ছিলো সিপিআইএম। তাদের অতি দাম্ভিকতার কাছে ফিকে হয়ে গিয়েছিলো রাজ্যের বাম ঐক্যের অন্যান্য শরিক দলগুলি। শুধু মাত্র অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য শরিকরা সিপিআইএমের লাল আচলে ধরে প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছিলো। বাম জামানায় বাম ঐক্যের শরিক নেতারা বহু বার সিপিআইএমের বিরুদ্ধে “অন্যায়ে’র অভিযোগ তুলেছিল।কিন্তু রাজনীতির ভর যৌবনে সিপিআইএম নেতৃত্ব কখনো এই সমস্ত অভিযোগ পাত্তাই দেয় নি।তার পেছনে অবশ্যই ছিলো ক্ষমতার অহংকার।আর সাধারণ মানুষের সঙ্গে সিপিআইএম নেতাদের দাম্ভিকতার কোনো স্তরে পৌঁছে ছিলো? তার ব্যাখ্যা যতটা কম দেওয়া যায় ততটাই ভালো।
টানা ২৫বছরের রাজত্ব কালে বামেরা স্বপ্নেও ভাবে নি এই রাজ্যে তাদের পতন ঘটতে পারে। বরং “ক্ষমতা হারাতে পারে”–কমিউনিস্টদের কাছে এই বিষয়টি ছিলো অলৌকিক। স্বাভাবিক ভাবেই সিপিআইএম মন্ত্রী-নেতা থেকে শুরু করে অঞ্চল ও ব্রাঞ্চ কমিটির সিকি-আধুলি নেতাদের দাম্ভিকতাও যেন পৌঁছে গিয়েছিলো রাজ্যের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ “বেটলিং শিপ”র ( বেটলিং শিব) চূড়ায়। বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দল বেটলিং শিপ”র চূড়ায় উঠে সিপিআইএমকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে? তা অন্তত ভাবে নি কমিউনিস্টরা।কিন্তু ২০১৮-তে তাই হয়েছে। কমিউনিস্টদের শৃঙ্গ সমান দাম্ভিকতাকে টেনে হিঁচড়ে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল রাজ্যের মানুষ। আর এখনো সেই যন্ত্রনাকেই তাড়া করে বেড়াচ্ছে রাজ্যের কমিউনিস্টরা।
রাজ্যের মানুষ কমিউনিস্টদের ২৫বছরের দাম্ভিকতাকে এখনো ভুলতে পারিনি।তার প্রমান পাওয়া গিয়েছে তেলিয়ামুড়ার চাকমাঘাটে।তাও আবার দলের প্রধান সেনাপতি জিতেন্দ্র চৌধুরীর জনসভায়।বুধবার চাকমাঘাটে ৭৭তম জনশিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে জিএমপি জনসভার আয়োজন করেছিলো।জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জিতেন্দ্র চৌধুরী।কিন্তু সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদকের জনসভায় প্রত্যাশিত কোনো লোক সমাগম হয় নি। গোটা মাঠ ছিলো ফাঁকা। হাতে গুনা যায় জিতেন্দ্র’র সভায় উপস্থিত লোকজনকে? মনে হচ্ছিল পৌষের শীতের দুপুরে কিছু মানুষ রোদের আমেজ নিতে এসেছিলো জিতেন্দ্র চৌধুরীর জনসভায়। সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদকের জনসভায় এই দৃশ্য দেখে রাজনীতিকরা বলছেন,”মানুষ এখনো বামেদের দাম্ভিকতার কথা ভুলতে পারছে না।তাই কোনো রকম “স্পেস” দিতে নারাজ।
তেলিয়ামুড়ার এক বিভাগীয় বাম নেতার বক্তব্য, জিতেন্দ্র চৌধুরীর জনসভায় মানুষ এসেছে স্বর্তস্ফূর্ত ভাবে। দলের আরো কর্মী-সমর্থকদের আসার কথা ছিলো। আসতো সাধারণ মানুষও।কিন্তু তারা ভয়ে জড়ভরত। তদের মনে তাড়া করছে এক অজানা ভয়।কারণ জনসভা থেকে বাড়ি ফিরে গেলেই তাদের উপর আছড়ে পড়তে পারে “সন্ত্রাসের বারুদ”।এই কারণেই সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।
রাজনৈতিক বিশারদদের বক্তব্য, “রাজনীতির মিছে ক্ষমতা” নিয়ে আস্ফালন করা উচিত নয়।একবার মানুষ তা বুঝে গেলে চূড়া থেকে রাস্তায় নামিয়ে আনবে।আর চূড়ায় উঠবে না।অন্তত রাজ্য কমিউনিস্ট’র বর্তমান অবস্থা তাই প্রমান করে। ভয়ে নয়,বাস্তবে কমিউনিস্টদের কৃতকর্মের জন্য এখনো প্রতি মানুষ বিমুখ। ধারণা রাজনীতির প্রাজ্ঞদের।
তবে সাধু সাবধান। “মিছে ক্ষমতা”র আস্ফালন “কোনো শক্তি”র জন্যই শুভ নয়। হাতের তালুতে থাকা বালির কণার মতোই একদিন উড়ে যাবে “ক্ষমতা”। তাই ক্ষমতার অপব্যবহার না করে সদ ব্যবহার করা উচিত।তখনই রাজনেতাদেরও “মনের ফ্রেমে” বেঁধে রাখবে আমজনতা।
