* অভিজিৎ ঘোষ *
—————————–
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের অপ্রত্যাশিত ফলাফল।হাতছাড়া হয়েছে পাঞ্জাব। কংগ্রেসকে টেক্কা দিয়ে বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে এলো আম আদমি পার্টি। বাদবাকি গোয়াতে কিছুটা লড়াই করেছে।এবং অন্তত বিরোধী দলের তকমা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেস বিরোধী হলেও আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। মণিপুরে আঞ্চলিক দল এবং নির্দল থেকেও কংগ্রেস কম আসন পেয়েছে।খুব করুন অবস্থা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন, যোগী সরকারের প্রতিষ্ঠান বিরোধী হওয়ার মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে কংগ্রেস।সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।কিন্তু উত্তর প্রদেশে গেরুয়া সাইক্লোন খড়-কুটুর মতো উড়ে যায় কংগ্রেস। এবং গড়ে নতুন রেকর্ডও।স্বাধীনতার পর উত্তর প্রদেশের রেকর্ড সংখ্যা কম আসন পেয়েছে কংগ্রেস। পাঁচ রাজ্যে কংগ্রেসের এই ফলাফলে হতাশ দলীয় কর্মী সমর্থকরা।সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মানুষ বুঝিয়ে দিলেন, কংগ্রেসের প্রতি তাদের আস্থা নেই।দেশের মানুষের আশা-ভরসার কেন্দ্র বিন্দু ‘বিজেপি’ই। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল প্রমান করে দিলো ২৪-র জাতীয় নির্বাচনের গতি পথ কোন দিকে বাঁক নিচ্ছে?
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায়, পাঁচ রাজ্যের ৬৯০টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট হয়েছে।তারমধ্যে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে মাত্র ৫৩টি আসনে। শতাংশের হিসাবে এই পরিসংখ্যান মোট আসন সংখ্যার ৮ শতাংশের চেয়েও কম। শতাব্দীর প্রাচীন কংগ্রেস দলের কাছে এই পরিসংখ্যান সত্যিই লজ্জার।
দেশীয় রাজনীতির পিন কিং ” উত্তর প্রদেশ”-এ ভোট হয়েছে ৪০৩টি বিধানসভা আসনে। ম্যাজিক ফিগার ২০২। উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ২টি আসন।কংগ্রেসের দুর্গ রায়বারেলিতে চূড়ান্ত ফ্লপ করে কংগ্রেস।হয়তো বা উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের এই রেজাল্ট আশা করিনি খোদ প্রধান শক্তি বিজেপিও।তবে বিএসপি থেকে ১টি আসন বেশী পেয়েছে কংগ্রেস। এটাই স্বস্তির।
———–
* উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ২টি।

* মণিপুরে কংগ্রেসের আসন ৪টি।

* গোয়াতে কংগ্রেসের আসন ১১টি ।

* পাঞ্জাবে কংগ্রেসের আসন ১৮টি।

* উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ১৮টি।
——–
পাঞ্জাবে শাসন ক্ষমতায় ছিলো কংগ্রেস।কিন্তু ফলাফল নিরাশ জনক।বিরোধী তকমা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে কংগ্রেসকে। কৃষক আন্দোলন থেকে কোনো ফায়দা নিতে পারলো না কংগ্রেস। বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে এলো আপ।কংগ্রেসকে ছুড়ে ফেলে দখল করলো ক্ষমতা।১১৭ আসনের পাঞ্জাব বিধানসভায় পূর্বতন শাসক দল কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১৮টি আসন।
সমুদ্র সৈকত গোয়াতে ৪০আসনের বিধানসভায় কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। বিজেপি একই পেয়েছে ২০টি।ম্যাজিক ফিগার ২১টি। আপ পেয়েছে ২টি, স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও তৃণমূল কংগ্রেস মিলে আরো পাঁচটি আসন।স্থানীয় রাজনৈতিক দল যোগ দেবে বিজেপি’র সঙ্গে।স্বভাবিক ভাবেই গোয়াতে সরকার গঠন করবে বিজেপি।এবং বিরোধী আসনে থাকবে কংগ্রেস।
উত্তরাখণ্ডেও কংগ্রেসকে থাকতে হলো বিজেপি’র পেছনের সারিতে।৭০ আসন বিশিষ্ট উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছে ১৮টি আসন। বিজেপি পেয়েছে ৪৭টি।বিএসপি এবং অন্যান্যরা পেয়েছে ২টি করে আসন। এই রাজ্যের ম্যাজিক ফিগার ‘৩৬’।
মণিপুরে কংগ্রেসের খুব করুন দশা।মণিপুরে আঞ্চলিক দলগুলিও কংগ্রেস থেকে ভাল ফলাফল করে। মণিপুরে মোট আসন সংখ্যা ৬০।তারমধ্যে বিজেপি একা পেয়েছে ৩০টি।কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৪টি। আঞ্চলিক দল এনপিপি ও এনপিএফ পেয়েছে ৭টি করে।এবং নির্দল সহ অন্যান্যরা পেয়েছে আরো ১০টি।তারা অবশ্যই এনপিএফের সঙ্গে জোট। এখানে রয়েছে বিজেপি শরিক দল।স্বাভাবিক ভাবেই ১টি ম্যানেজ করা বিজেপি’র জন্য কোনো বিষয় নয়।তাছাড়া বিজেপি’ই একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দল।
রাজনীতিকরা বলছেন, কংগ্রেসের এই ফলাফল হতাশায় গ্রাস করবে দলীয় কর্মী সমর্থকদের।আগামী বছর ত্রিপুরা, গুজরাট সহ বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে।তাতেও প্রভাব পড়বে।ত্রিপুরাতে কংগ্রেসের মরা গাঙে কিছুটা জল আসতে শুরু করেছিল।কিন্তু এখন জল আসা বন্ধ হয়ে যাবে।কারণ পাঁচ রাজ্যের ফলাফল দেখে মানুষ সরে যাবে কংগ্রেসের রাজনৈতিক অক্ষরেখা থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *