ডেস্ক রিপোর্টার, ২৮অক্টোবর।।
    দুয়ারেই বিধানসভা নির্বাচন। এবারের বিধানসভা নির্বাচন অন্যান্য বারের তুলনায় অনেকটাই টাফ, বলছেন রাজনীতিকরা। শাসক দল বিজেপির কাছে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ এই নির্বাচন। ২৩র হার্ডল টপকাতে একের পর এক কৌশল স্থির করছে শাসক  শিবির। তারমধ্যে গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত অবস্থা দলের ৭০ঊর্ধ্ব নেতা, বিধায়ক ও মন্ত্রীরা।কারণ তাদের এবার নির্বাচনে টিকিট দিচ্ছে না দল। ভারতীয় জনতা পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের ললাটে এবার প্রার্থী হিসাবে নাম লেখা থাকবে না।পরিবর্তে আসবে নতুন মুখ। কিন্তু এই বৃদ্ধ রাজনীতিকরা কি তা মেনে নেবেন? নাকি তারা বিদ্রোহ ঘোষনা করে ফের লাইন ধরবেন অন্য রাজনৈতিক দলে?এই নিয়ে খোদ বিজেপির অন্দরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
         রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী রতন লাল নাথ, রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী,রাজধানীর রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত সহ আরো কয়েকজন বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের বয়স ৭০ ঊর্ধ্ব।আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নিয়ম অনুযায়ী, তাদের টিকিট না পাওয়ার কথা।যদি তাদের ভারতীয় জনতা পার্টি টিকিট না দেয় তাহলে এই সমস্ত স্বার্থন্বেষী রাজনীতিকরা বিকল্প হিসেবে অন্য কোন রাজনৈতিক দলে নাম লেখানো চেষ্টা করবেন। এমনটাই বলছেন রাজনীতিকরা। তাতে অবশ্যই বিপদ বাড়বে বিজেপির। কেননা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী,বিধায়ক ও নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক রয়েছে ।এবারের কঠিন লড়াইয়ে এই ভোট ব্যাংক বিজেপির অনুকূলে না আসলে শাসক শিবিরের যে সমস্যা বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
          বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে রাজনীতিকরা বলছেন, রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তীর নির্বাচনে ক্ষেত্র খয়েরপুরে তার তেমন কোন দাপট নেই l। নেই ব্যক্তিগত সংগঠনের ধারও। খয়েরপুর বিধানসভা কেন্দ্রে রতন চক্রবর্তী বিশেষ বড় কোন টিম নেই ।এই পরিস্থিতিতে রতন চক্রবর্তীকে খয়েরপুর থেকে প্রার্থী না করলে বিজেপির বিশেষ কোনো সমস্যা হবে না। আর রতন চক্রবর্তীর মত বিচক্ষণ মানুষ ভালো করেই জানেন তাদের রাজনৈতিক জীবন এখন একেবারেই ঘোর সায়হ্নে। স্বাভাবিক কারণেই টিকিট নিয়ে তিনি খুব বেশি জারিজুরি করবেন না ।
         রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য রতনলাল নাথের নির্বাচনী ক্ষেত্র মোহনপুরে তার নির্দিষ্ট একটা ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে ।এই ভোট ব্যাংক যথেষ্ট শক্তিশালী। যদি বিজেপির সঙ্গে টিকিট নিয়ে তার মন কষাকষি হয় তাহলে তিনি দলকে আলবিদা জানিয়ে দিতে পারেন। এবং পারেন বিকল্প কোন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতেও । এমনই আভাস রাজনৈতিক মহলে।
         রাজনীতিকদের ব্যাখ্যা, এই সমস্ত নেতারা বরাবরই নিজেদের স্বার্থকে সামনে রেখেই রাজনীতির গুটি সাজিয়েছেন। যদি টিকিট না পান, তাহলে দল ছাড়তেও দ্বিধাবোধ করবেন না । আর যদি তাই হয় তাহলে রতন লাল নাথের এই নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক চলে যাবে বিজেপির প্রতিকূলে। তখন অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রে বিপদ বাড়বে ভারতীয় জনতা পার্টির। লোক মুখে শোনা যায়,আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রতন লাল নাথ আর লড়াই করবেন না।পরিবর্তে তিনি নিজের ছেলে আবীর নাথকে সামনে আনতে চাইছেন। তবে ভারতীয় জনতা পার্টি রতনলাল নাথের এই প্রস্তাবকে কতটা মান্যতা দেবে তা বলবে সময়েই।
         রাজধানীর রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিত দত্ত। তার বয়সও ৭০ উর্ধ্বে। শারীরিকভাবে তিনি সক্ষম নন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। এই অসুস্থতার কারণে তিনি নিয়ম করে বিধানসভার অধিবেশন গুলিতেও হাজির থাকতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে সুরজিতের শারীরিক অবস্থা ও দলের গঠনতন্ত্রকে মান্যতা দিয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট প্রত্যাশীর তালিকায় তার নাম না থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে সুরজিত দত্ত চাইছেন তার পরিবর্তে এই বিধানসভা কেন্দ্রে তার এই ভাইপো এবং বর্তমান আগরতলা পুরো নিগমের কর্পোরেটর অভিষেক দত্তকে প্রার্থী করার জন্য । তবে শেষ সিদ্ধান্ত নেবে ভারতীয় জনতা পার্টির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।
         কিন্তু এখন দেখার বিষয় এই সমস্ত নেতারা যদি টিকিট হাসিল করতে না পারেন তাহলে দল ছাড়তেও তাদের শনি –  মঙ্গলবার লাগবে না। রাজ্যের মানুষ এই সমস্ত নেতাদের চরিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল । তারা প্রত্যেকেই কয়েকবার করে বিভিন্ন একদল থেকে অন্য দলে যোগ দিয়েছেন।
স্বার্থ যেখানে, তারাও থাকবে  সেখানে। এটা অবশ্যই তাদের একান্ত নিজস্ব বিষয়। তারা বিজেপি থেকে টিকিট না পেলে, তা নিয়ে রাজনীতিতে নামবে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি।বিশেষ ভাবে কংগ্রেস।এটা বলাই বাহুল্য।ইতিমধ্যে কংগ্রেস বিজেপির বয়স্ক নেতাদের পরোক্ষ ভাবে প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছেন। এমন খবর রাজনৈতিক মহলে। এই সমস্ত নেতাদের মূল রুট কংগ্রেসে। তাই তারা যদি বিজেপি থেকে বঞ্ছিত হয়ে ফের পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে ঝাঁপ দেয়,তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।এটাও বাস্তব বিজেপিও তাদের এতো সহজে ছেড়ে দেবে না। সংশ্লিষ্ট নেতাদের টিকিট না দিলেও,তাদের ধরে রাখার জন্য শেষ চেষ্টা যে করবে,এটা নিশ্চিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *