
ডেস্ক রিপোর্টার,২৩ রিপোর্টার।।
২৩- র হাই ভোল্টেজ বিধানসভা নির্বাচনে রাজধানীর টাউন বড়দোয়ালী কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস তথা জোটের প্রার্থী আশীষ কুমার সাহা।
২০২২- র উপ নির্বাচনে ৮- টাউন বড়দোয়ালী বিধানসভা কেন্দ্র থেকে মুখ্যমন্ত্রী ডা মানিক সাহা জয়ী হয়েছিলেন।তিনি পরাজিত করেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী আশীষ কুমার সাহাকে।সংসদীয় রাজনীতিতে এটাই ডা মানিক সাহার প্রথম জয়। বলা যায় টাউন বড়দোয়ালি কংগ্রেস নেতা আশীষ কুমার সাহার গড়। তিনি এই কেন্দ্র থেকে ধারাবাহিক ভাবে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসছিলেন। সর্ব শেষ উপ নির্বাচনে ঘটেছিলো ছন্দ পতন।
আগামী ২রা মার্চ বিধানসভা নির্বাচনের গণনা। তার আগে হেভি ওয়েট টাউন বড়দোয়ালি কেন্দ্র নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ করছেন রাজনীতিকরা। এই কেন্দ্রে কে এগিয়ে? মুখ্যমন্ত্রী না বাম কংগ্রেস জোটের প্রার্থী আশীষ কুমার সাহা। এই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরে।
*টাউন বড়দোয়ালী কেন্দ্রের
গ্রাউন্ড জিরোর রিপোর্ট ৫৫- ৪৫।
* ৫৫ শতাংশ ঝুঁকে আছে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে।
*৪৫ শতাংশ ঝুঁকে আছে
আশীষ কুমার সাহার দিকে।
*চিত্র পরিষ্কার,লড়াই হাড্ডাহাড্ডি ।
রাজনীতিকরা বলছেন,গ্রাউন্ড জিরোর রিপোর্টে মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে থাকলেও পড়বেন কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে। তারপরও ভোটের শেয়ার বাজারে মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই নাকি বাজির দর বেশি। তার পেছনেও কারন রয়েছে। ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজনীতিকরা।
রাজ্য রাজনীতির ইতিহাসের পাতা ঘাটলে দেখা যায়, ১৯৬৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত
কোনো মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে পরাজিত হন নি।১৯৬৩ – র ১লা জুলাই থেকে ১৯৭১-র ১লা নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে ছিলেন কংগ্রেস নেতা শচীন্দ্র লাল সিং।১লা নভেম্বর ১৯৭১ থেকে ২০মার্চ ১৯৭২ পর্যন্ত ছিলো রাষ্ট্রপতি শাসন। ১৯৭২ সালে ফের অনুষ্ঠিত হয় বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু এই নির্বাচনে শচীন্দ্র লাল সিং লড়াই করেন নি। স্বাভাবিক ভাবেই বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শচীন্দ্র লাল সিং অপরাজিত থেকে যান।

১৯৭২ এর বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন কংগ্রেস নেতা সুখময় সেনগুপ্ত।তিনি ১৯৭২ এর ২০ মার্চ থেকে ১৯৭৭ এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৭ এর নির্বাচনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সুখময় সেনগুপ্ত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।কিন্তু তার সরকার ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। সরকার গঠন করে নতুন রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ফর ডেমোক্রেসি অর্থ সি এফ ডি। কিন্তু বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সুখময় সেনগুপ্ত ছিলেন অপরাজেয়।

সিএফডি সরকারের স্থায়িত্ব ছিলো মাত্র চার মাস। এই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন প্রফুল্ল দাস।১৯৭৭ এর ১লা এপ্রিল থেকে ২৫জুলাই পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন প্রফুল্ল দাস। কিন্তু সরকার ভেঙ্গে যাওয়াতে তিনিও সরে যান।তবে প্রফুল্ল দাসও বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ছিলেন অপরাজেয়। এই বছরই সিএফডি সরকার ভেঙ্গে নতুন জনতা দলের সরকার গঠিত হয়।মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন রাধিকা রঞ্জন গুপ্ত।তিনি ছিলেন জনতা পার্টির নেতা। ১৯৭৭ এর ২৬জুলাই থেকে ৪নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু রাধিকা রঞ্জন গুপ্তের সরকারের স্থায়িত্বও বেশি দিন ছিলো না।
১৯৭৭ এর ৫নভেম্বর ১৯৭৮ এর ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যে ফের ছিলো রাষ্ট্রপতি শাসন।১৯৭৮ র ভোটেও রাধিকা রঞ্জন গুপ্ত নির্বাচনে লড়াই করে জয়ী হন।কিন্তু তার দল ক্ষমতায় আসেনি।সেই অনুযায়ী বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে রাধিকা রঞ্জন গুপ্ত ছিলেন অপরাজিত।

১৯৮৮ র ৫ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯২ র ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেস নেতা সুধীর রঞ্জন মজুমদার। এরপর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সমীর রঞ্জন বর্মন।তিনি ১০ মার্চ ১৯৯৩ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯৩ এর বিধানসভা নির্বাচনে সুধীর রঞ্জন মজুমদার লড়াই করেন নি। স্বাভাবিক ভাবেই তিনিও ছিলেন অপরাজিত মুখ্যমন্ত্রী।

১৯৯৩ র বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী সমীর রঞ্জন বর্মন নির্বাচনে লড়াই করে জয়ী হয়েছিলেন বিশালগড় কেন্দ্র থেকে। তিনিও বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে অপরাজিত।

১৯৯৩ এর ১১ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ছিলো রাষ্ট্রপতি শাসন। নির্বাচনের পর ফের ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। মুখ্যমন্ত্রী হন দশরথ দেব।১৯৯৩ র ১০মার্চ থেকে ১৯৯৮ এর ১১ মার্চ পর্যন্ত তিনি ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে। ১৯৯৮ র বিধানসভা নির্বাচনে দশরথ দেব লড়াই করেন নি।স্বাভাবিক ভাবেই তিনি থেকে অপরাজিত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে।

১৯৯৮ এর ১১ মার্চ থেকে ২০১৮ র ৯মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার আলো করে রেখেছিলেন মানিক সরকার।১৮ র বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে কমিউনিস্ট শাসনের পতন ঘটলেও টলেন নি মানিক সরকার। ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি জয়ী হয়েছিলেন।

২০১৮ র ৯ মার্চ থেকে ২০২২ র ১৪ মে পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে ছিলেন বিজেপি নেতা বিপ্লব কুমার দেব। সময়ের আগেই বিপ্লব কুমার দেবকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এরপরই মুখ্যমন্ত্রী হন ডা: মানিক সাহা।তিনি উপ ভোটেও জয়ী হয়েছিলেন। ২০২৩ র নির্বাচনে দুই মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ও বিপ্লব কুমার দেব লড়াই করেন নি। তাই তারাও চলে যান আনবিটেনের তালিকায়।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাদের কেউ কেউ সময় শেষে নির্বাচনে লড়াই করেন নি।আবার যারা নির্বাচনে লড়াই করেছেন তারা জয়ী হয়েছেন নির্দ্বিধায়। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৩- র বিধানসভা নির্বাচনেও কিন্তু এগিয়ে আছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডা:মানিক সাহা। এখন চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২রা মার্চ পর্যন্ত।এখন দেখার বিষয় মুখ্যমন্ত্রী ডা মানিক সাহা কি তার পূর্বসূরী মুখ্যমন্ত্রীদের আনবিটেন তকমা ধরে রাখতে পারেন কিনা।