#চলছে জমি জবর দখল।

# গ্রাম ছাড়ার ফতোয়া জারি।

#গ্রামের গাছ – গাছালি ধংস।

# টাক্কালের ভয়ানক খেলা শুরু।


ডেস্ক রিপোর্টার, ১৭ফেব্রুয়ারী।।
                  “রাজ্যের এডিসি এলাকায় এক ইঞ্চি জমিও দেওয়া হবে না অনুপজাতিদের”। সম্প্রতি রাজ্যের বিরোধী দল তিপ্রামথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যুৎ কিশোর এই মন্তব্য করেছিলেন তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  নির্মল আচার্য্য নামে এক যুবক
পশ্চিম জেলার জেলা শাসকে দেওয়া একটি চিঠির প্রেক্ষিতে প্রদ্যুৎ কিশোর একথা বলেছিলেন ।
                     প্রদ্যুৎ কিশোরের এই বক্তব্যের প্রভাব কতটা পড়েছে,সাধারণ জনজাতিদের মধ্যে? এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান কি করেছে রাজ্য প্রশাসন? না,  প্রদ্যুৎ কিশোরের এই বক্তব্যের আঁচড় ভালো ভাবেই লেগেছে প্রান্তিক অঞ্চলে থাকা জনজাতিদের মনে। তারা হয়ে উঠেছে আগ্রাসী। এর জ্বলন্ত প্রমাণ কমলপুর মহকুমার  সালমার “পশ্চিম ডলুছড়া”।
               পশ্চিম ডলুছড়া গ্রামটি এডিসির বাইরে।কিন্তু এডিসির সীমানা লাগোয়া। গ্রামের রাস্তার এক পাশে গ্রাম পঞ্চায়েত।অপর পাশে ভিলিজ কাউন্সিল। স্বাভাবিক ভাবেই এই গ্রামটি স্পর্শ কাতর। এক সময় এই ডলুছড়া গ্রামের বুকে আছড়ে পড়েছিল  “রক্ত স্রোত”। এখন একই পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে এক শ্রেণীর মানুষ। তাও আবার প্রদ্যুৎ কিশোরের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে। অন্তত এমনটাই দাবী গ্রামবাসীদের।


পশ্চিম  ডলুছড়া গ্রামের বাসিন্দা পরিমল দেবনাথ। প্রায় সত্তর বছর ধরে বংশানুক্রমে পরিমল দেবনাথের পরিবার বসবাস করছেন। বুকে সহ্য করেছেন অসংখ্য যন্ত্রণা। তারপরও আকড়ে ধরে রেখেছেন পৈতৃক ভিটে মাটি। শুধু পরিমল কেন? এই গ্রামের প্রতিটি পরিবারের একই অবস্থা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সম্প্রতি পরিমল দেবনাথ গিয়েছিলেন তার জমিতে কাজ করতে। এমন সময় পাশের জনজাতি গ্রাম থেকে এক দঙ্গল লোকজন টাক্কাল হাতে নিয়ে হাজির পরিমলের জমিতে। তাকে হুমকি দেওয়া হয় জমি থেকে সরে যাওয়ার জন্য। পরিমল তাতে রাজি না হয়ে, পাল্টা প্রতিবাদ করেন। তখনই উপস্থিত জনজাতি অংশের মানুষের ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে আসে।


“স্থানীয় জনজাতি যুবক সুধীন্দ্র দেববর্মার নেতৃত্বে জনজাতি অংশের লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়ে পরিমলের উপর। সুধীন্দ্র দেববর্মা কৃষক পরিমল দেবনাথের গলায় সরাসরি টাক্কাল ধরে।” জানিয়েছেন ডলু ছড়ার আতঙ্কগ্রস্থ গ্রামবাসীরা। সুধীন্দ্র দেববর্মা হুমকির সুরে জানিয়ে দেয়, ডলোগ্রামটি  এডিসি এলাকায় না হলেও, এটা এখন তারাই দখল নেবে। কারণ এডিসি ও তার আশপাশ এলাকায় কোনো অনুপজাতি অংশের লোকজনকে তারা থাকতে দেবে না। সুধীন্দ্র দেববর্মার এই হুমকির পর পরিমল তার জমি থেকে সরে আসেন।পরবর্তী সময়ে পরিমল তার নিজের জমিতে থাকা গাছ কাটতে গিয়েছিলেন।সেখানেও তিনি বাধা প্রাপ্ত হন।


সুধীন্দ্র দেববর্মার নেতৃত্বে আসা লোকজন পরিমলকে গাছও কাটতে দেয়নি। সুধীন্দ্র নাকি হুমকি দিয়ে জানিয়েছে, এই সম্পত্তি এখন জনজাতিদের। তাই তারা পরিমল দেবনাথের জমিটি রাবার বাগান তৈরি করবে। শেষ পর্যন্ত অসহায় গ্রামবাসী পরিমল ভয়ে বাড়িতে চলে আসেন। পরিমল আসতেই তার গাছ – গাছালি কাটতে শুরু করে দেয় জনজাতি লোকজন। বাধ্য হয়ে পরিমল জমি ছেড়ে চলে আসেন।

।।”অস্ত্র”- টাক্কাল।।

ডলুছড়া গ্রামের প্রবীণ নাগরিক প্রয়াত রসময় দেবনাথ। এই পরিবারের লোকজন এখন গ্রামে থাকেন না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রয়াত রসময় দেবনাথের জমিতে থাকা সমস্ত দামি দামি গাছ কেটে নিয়ে গিয়েছে জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ। অভিযোগ গ্রামবাসীদের।প্রয়াত রসময় দেবনাথের পরিবারের সদস্যরা কেন গ্রামে থাকেন না? এই প্রশ্নের উত্তরে আতঙ্কগ্রস্থ গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ১৯৯২ সালে রসময় দেবনাথের ছেলে বলরাম দেবনাথকে অপহরন করে খুন করা হয়েছিল। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলো রাজ্যের জঙ্গিরা। এর পর থেকেই রসময় দেবনাথের পরিবার গ্রাম থেকে ভিটে মাটি ছেড়ে চলে আসেন।এখন প্রয়াত রসময় দেবনাথের ক্ষেত খামার ধীরে ধীরে দখল নিচ্ছেন জনজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন। নিধান দেববর্মা নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে চলছে জমি দখলের ব্লু প্রিন্ট।


পশ্চিম ডলুছড়া গ্রামের আরেক বাসিন্দা মানিক নাথ।গ্রামের মধ্যে তার চন্দন গাছের বাগান ছিল। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে তিনি চন্দন গাছের চারা লাগিয়ে ছিলেন। এটা সহ্য করতে পারেনি পাশের গ্রামের জনজাতি অংশের লোকজন। তারা রাতের আধাঁরে চন্দন বাগান নষ্ট করে দেয়। কেটে দেয় সমস্ত গাছ। মানিক নাথের পরিবারের অভিযোগ, পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে জনজাতি অংশের লোকজন তাদের চন্দন বাগান ধংস করে দিয়েছে। এই ঘটনা জানানো হয়েছিলো রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জনকে। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, নিধান দেববর্মার নেতৃত্বেই চন্দন বাগান ধংস করা হয়েছিলো।


পশ্চিম ডলুছড়া গ্রামবাসীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা প্রতিটি ঘটনা জানিয়েছে প্রশাসনকে। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে ধলাই জেলার জেলা শাসকের কাছে তারা ডেপুটেশন দেবে।এবং চাইবেন নিশ্চিত নিরাপত্তা। গ্রামবাসীদের কথায়, রাজ্যের জঙ্গি সংগঠন গুলি কালে কালেই হামলা চালিয়ে ছিলো এই গ্রামে। টিএনভি, এনএলএফটি ও এটিটিএফের বুলেটে এই গ্রামের ৩৭ জন গ্রামবাসী খুন হয়েছে। ৪২টি পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে গ্রাম ঠেকে উচ্ছেদ করেছে জনজাতিরা। পুলিশের খাতায় এই সমস্ত রেকর্ড জ্বলজ্বল করছে। তারপরও কি পুলিশ প্রশাসন ডলুছড়া গ্রামের মানুষকে নিরাপত্তা পেরেছে। বাম থেকে রাম,সব সরকারের জামানতেই এক গভীর আতঙ্ক নিয়ে প্রতিদিন রাত্রি যাপন করছে
অভিশপ্ত ডলুছড়ার গ্রামবাসীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *