ডেস্ক রিপোর্টার,২৬ফেব্রুয়ারি।।
কংগ্রেস-বিজেপি’র সংঘর্ষে তপ্ত রাজধানী। শহরের কামার পুকুর পাড় থেকে পোস্ট অফিস চৌমুহনী নিয়েছিল রণক্ষেত্রের রূপ।কংগ্রেসের সভাস্থলে হামলা, ভাঙচুর।দুই রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্যে মারামারি, ইট বৃষ্টি,তারপর বোমা বিস্ফোরণ।সবই ঘটে শনিবার।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অরক্ষা প্রশাসন শহরের কিছু কিছু জায়গাতে জারি করেছে ১৪৪ধারা।দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে আতঙ্কিত মানুষ দ্রুত ফিরে যায় বাড়ি-ঘরে। পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় রুজু করেছে মামলা।কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মন সহ কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন গুরুতর জখম হয়েছেন। আহতের তালিকায় রয়েছে বিজেপি’র কর্মীরাও।বাদ যায় নি পুলিশ ও সংবাদ মাধ্যম। কয়েকজন পুলিশ কর্মী ও সাংবাদিক আহত হয়েছেন দুই পক্ষের ছোড়া ইট-পাটকেলে।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, এদিন কামার পুকুর পাড়ে কংগ্রেসের সভা ছিলো।এই সভাস্থলে জড়ো হয়েছিলো লোকজন।সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো হয়েছিলো চেয়ার। মঞ্চে ছিলেন কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মন,আশীষ সাহা সহ এআইসিসি’র নেতৃত্ব।
কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপির দুষ্কৃতীরা সংঘবদ্ধ ভাবে আচমকা হামলা চালায় কংগ্রেসের সভা মঞ্চে। ভেঙে দেয় মঞ্চ, আক্রমণ করে কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মনকে।সভায় উপস্থিত কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের উপরও হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। বিজেপি’র লোকজনের আক্রমণে হতভম্ব কংগ্রেস কর্মীরা।তারাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলে।প্রকাশ্যে কংগ্রেস-বিজেপি’র কর্মীদের মধ্যে হয় সংঘর্ষ। ভয়ে তটস্থ হয়ে উঠে সাধারণ মানুষ। বিজেপি’র দুস্কৃতিদের হামলায় সুদীপ রায় বর্মন সহ বেশ কয়েকজন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দুই রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকদের পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চার্জ করে।
বিজেপি’র দুস্কৃতিদের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সুদীপ রায় বর্মন সহ কংগ্রেস নেতৃত্ব মঠচৌমুহনী এলাকায় পথ অবরোধ করে।অবশেষে পুলিশ তাদের পুলিশ তাদের পথ অবরোধ আন্দোলন থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর কংগ্রেস কর্মীরা চলে আসে পোস্টঅফিস চৌমুহনী কংগ্রেস ভবনে।
বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, কংগ্রেস কর্মীরা পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে থাকা বিজেপি’র সমস্ত ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে দেয়।নরেন্দ্র মোদী-বিপ্লব দেবের ছবি পা-দিয়ে মাড়িয়ে দেয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিজেপি’র কর্মী-সমর্থকরা এক জোট হয়ে মিছিল করতে করতে কংগ্রেস ভবনের সামনে আসে। এই মিছিলে ছিলেন রাজ্যের তথ্য মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। মন্ত্রী বলেন, বিজেপি’র মিছিল পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে আসতেই কংগ্রেস ভবন থেকে মিছিল লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। অল্পতে বেঁচে যায় মিছিলে উপস্থিত কর্মী-সমর্থকরা।
কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপি’র কর্মীরা রাতে কংগ্রেস ভবনে হামলা করে।পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে মিছিল করে এসে বিজেপি’র কর্মীরা।এরপর তারা কংগ্রেস ভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে। ভবনের সামনে থাকা কংগ্রেস কর্মীদের মারধর করে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি’র মিছিল থেকে কংগ্রেস ভবন লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। তার কারণেই কংগ্রেস ভবন চত্বর বোমার কালো ধোঁয়াতে অন্ধকার হয়ে যায়। বিজেপি’র কর্মীরা কংগ্রেস ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করে। ভয়ে অনেকে নিরাপদ জায়গাতে আশ্রয় নেয়। পুলিশ কোনো রকমে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
রাতে পুলিশের কাছে খবর ছিলো কংগ্রেস ভবনে আরো কয়েকজন লুকিয়ে রয়েছে।গোটা ভবন তল্লাশি চালায় পুলিশ।তখন কংগ্রেস ভবন থেকে গ্রেফতার করা হয় শাহজাহান মিয়া , সম্রাট রায় ও রাধেশ্যাম সাহা সহ আরো কয়েকজনকে। এনএসইউআই’র রাজ্য সভাপতি সম্রাট রায়কে পুলিশ সামনেই পোস্টঅফিস চৌমুহনীতে মারধর করে বিজেপি যুবকর্মী ভিকি প্রসাদ। পুলিশ ছিলো ঠুঁটো জগন্নাথ। জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ঘটনার রাতে পশ্চিম থানার পুলিশ মামলা রুজু করে।এবং নয় জন কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করে।তাদের মধ্যে তিন জন মহিলাও রয়েছে। রাতেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অরক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ধারা জারি করা হয় শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে। শাহরেরের কামার পুকুর পাড় সহ গোটা মঠচৌমুহনী,পুরাতন মোটর স্ট্যান্ড,পোস্ট অফিস চৌমুহনী, কর্নেল চৌমুহনী থেকে বিদুরকর্তা চৌমুহনী, ইন্দ্রনগর থেকে জিবি,অভয়নগর এলাকার বলবৎ করা হয়েছে ১৪৪ধারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *