ডেস্ক রিপোর্টার, ১৪সেপ্টেম্বর।।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর রাজ্যের রাজ্যসভার একমাত্র আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যেই শাসক দল বিজেপি ও বিরোধীদল সিপিআইএম তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এবং প্রার্থীরা জমা করেছেন মনোনয়ন পত্র।
রাজ্যসভার একটি আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং বাম প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী ভানু লাল সাহা। রাজ্যসভার নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে জোটচর্চা শুরু হয়ে গেছে। রাজনীতিকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনেও ক্রস ভোটিংয়ের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
গত কয়েক মাস আগে ত্রিপুরার রাজ্যসভার একটি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনে প্রত্যাশিতভাবেই জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থী ডা: মানিক সাহা। কিন্তু তিনি বেশিদিন রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে থাকতে পারেননি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সপে দেয়। এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী সময়ে ডা: মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর ফলে শূন্য হয়ে গিয়েছিল ত্রিপুরার রাজ্যসভার একমাত্র আসনটি।
সম্প্রতি রাজ্যসভার একমাত্র আসনে ভোটের দামামা বেজে ওঠেছে। রাজ্যসভার একটিমাত্র আসনে উপভোটের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয় আগামী ২২ সেপ্টেম্বর। মূল লড়াই হবে বাম প্রার্থী ভানু লাল সাহা ও বিজেপির প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেবের মধ্যে। রাজ্যসভার এর আগের নির্বাচনেও ক্রস ভোটিং এর আশঙ্কা করা হয়েছিল এবং এই আশঙ্কা সত্যিও হয়েছিল। শাসক দল বিজেপির শিবিরের দুইটি ভোট পেয়েছিলেন বাম প্রার্থী।অর্থাৎ তৎকালীন বিজেপির প্রার্থী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহাকে নিজের দলের দুইজন বিধায়ক ভোট দানে বিরত ছিলেন। দুই বিধায়ক এই ভোটের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভের বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। বিজেপি সূত্রের খবর, পরবর্তী সময় দল এই দুই বিধায়ককে শনাক্ত করেছিল। যদিও পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিজেপি তাদের বিরূদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় নি।
রাজনৈতিকদের বক্তব্য, এবারের রাজ্য সভার ভোটে ক্রস ভোটিংয়ের প্রবল সম্ভাবনা। কেননা, দলের অনেক বিধায়কের সঙ্গেই বিপ্লব কুমার দেবের সমস্যা তৈরি হয়েছিল। মূলত এই কারণেই একাংশ বিধায়ক বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। তারা ব্যক্তি বিপ্লবের বিরুদ্ধে জেহাদও ঘোষণা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী বিধায়ক গোষ্ঠীর তিন বিধায়ক বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন। এই মুহুর্তে দলে আছেন, এমন বিধায়কদের সঙ্গেও নানান কারণে বিপ্লব কুমার দেবের সম্পর্ক তলানীতে।
তারাও এক সময় দল ছাড়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলো। যদিও তারা শেষ পর্যন্ত দল ছাড়েন নি। বিজেপির অন্দরমহলে কান পাতলে এমনই কথা শোনা যায়। দলে থাকা এই সমস্ত বিধায়করা আজও বিপ্লব কুমার দেবকে সহ্য করতে পারছে না। এবং তাদের সঙ্গে বিপ্লবের সম্পর্কের বরফও গলেনি। এই পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী বিধায়কদের একাংশ রাজ্যসভার নির্বাচনে বিপ্লব কুমার দেবকে আদৌ ভোট দেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিপ্লব দেবের সঙ্গেই মূলত তাদের ঝামেলা। এই কারণেই রাজ্যসভার ভোটে তারা বিপ্লব কুমার দেবকে বয়কট করতে পারেন। তারা ভোট দিতে এলেও এই ভোট বিপ্লব দেবের পক্ষে যাবে কিনা তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এই সমস্ত বিধায়করা ক্রস ভোটিং করার সম্ভাবনা থাকবে। তাদের ভোট চলে যেতে পারে বিপক্ষ শিবিরে। কেননা সজ্জন ব্যক্তি ডা: মানিক সাহার ক্ষেত্রেও ক্রসিং ভোট হয়েছিল।এবং তিনি পেয়েছিলেন দুইটি ভোট কম। বিপ্লব কুমার দেবের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা অনেকটাই বাড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতির বিশারদরা। এই মুহুর্তে রাজ্য বিধান সভার ৬০ আসনের মধ্যে বামেদের দখলে ১৫জন বিধায়ক, কংগ্রেস ১জন।আইপিফটি ৮জন। বাদবাকি ৩৬জন বিজেপির। বিজেপি, আইপিএফটি জোটের মোট বিধায়ক সংখ্যা ৪৪জন।স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্য বিধানসভায় সংখ্যা তত্ত্বের বিচারে বিজেপি প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেবের জয় নিশ্চিত। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই নজর থাকবে ক্রস ভোটের দিকে। কোন কোন বিধায়ক দলীয় প্রার্থীকে ভোট বয়কট করেছেন?সেদিকেই লক্ষ্য রাখবে বিজেপি। তবে এই সংখ্যা যদি তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই বিজেপির আগামীর ভাগ্য আকাশে ঘনীভূত হতে পারে কালো মেঘ,বলছেন রাজনীতিকরা।