ডেস্ক রিপোর্টার, ১৫আগস্ট।।
   এক দশক আগেও রাজ্য রাজনীতিতে  বাম -কংগ্রেস ছিলো একে অপরের শত্রু।তারা ছিলো রাজনীতির যুযুধান দুই শক্তি।শাসক – বিরোধীর চেয়ারে শোভা বর্ধন করতেন বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব।
মেলারমাঠ ধংসের মন্ত্র জপ করতো পোস্ট অফিস চৌমুহনী।অনুরূপ মন্ত্র জপ করতো পোষ্ট অফিস চৌমুহনীও।


রাজ্য রাজনীতিতে এখন বাম – কংগ্রেসের শত্রুতার চিত্র উধাও।এখন সাদা বাড়ি ও লাল বাড়ির সদস্যদের মধ্যে শুধুই মিত্রতা। রাজনীতিকরা বলছেন, এই মিত্রতা করতে গিয়ে ২৩- র বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষতি হয়েছে বামেদের।লাভ হয়েছে কংগ্রেসের। তবে নৈতিক পরাজয় ঘটেছিলো জাতীয় কংগ্রেসের।কারণ দীর্ঘ দিন বিরোধী দল থাকা সত্বেও বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিশটি আসনেও তারা প্রার্থী দিতে পারে নি। মেলারমাঠের বদান্যতায় ১১টি প্রার্থী দিয়েছিলো কংগ্রেস। এবং বামপন্থী ভোটার ও বিজেপির বিক্ষুব্ধ ভোটারদের দৌলতে তিনটি আসন দখল করতে সক্ষম হয়েছিল।


রাজ্যের দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও বামেদের কাছে কংগ্রেসের পরাজয়।বামেরা একটি আসনও দেয় নি কংগ্রেসকে।মেলারমাঠ থেকে সুদীপ – আশীষকে
পত্র পাঠ বিদায় করে দিয়েছেন বাম নেতৃত্ব।তাহলে কেন এবং কার স্বার্থে বামেদের সমর্থন করবে কংগ্রেস?প্রশ্ন তুলছে সোনামুড়ার কংগ্রেস নেতৃত্ব।
  


জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব ভেবে ছিলো উপভোটে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেস একটি করে আসন ভাগাভাগি করবে। ধনপুর ছেড়ে দেবে সিপিআইএমকে। এবং বক্সনগর রাখবে কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের কথায়,  সেই পথে হাঁটেন নি সুদীপ – আশীষ। হয়তো বা তারা বামেদের কাছে ভিক্ষা চেয়েছিলেন বক্সনগর।


কিন্তু সুদীপ – আশীষের ঝুলিতে কোনো ভিক্ষা দেয় নি মেলারমাঠের জিতেন – নারায়ণরা। ভিক্ষা না পেয়েও সুদীপ – আশীষরা বামেদের সমর্থন করার  কথা নিশ্চিত করে। এবং আনন্দে  আত্মহারা হয়ে ফিরে আসেন পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে।


রাজনীতিকদের কথায়, পোস্ট অফিস চৌমুহনীর সাদা বাড়ির দন্ডমুণ্ডের কর্তারা ভেবেছিলেন তাদের সিদ্ধান্তই হবে শেষ কথা। তাই  মেলারমাঠ থেকে খালি হাতে ফিরে তারা গিয়েছিলেন সোনামুড়াতে।
রবি বাসরীয় দুপুরে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পোস্ট অফিস চৌমুহনীর সাদা বাড়ির প্রধান আশীষ কুমার সাহা।


সঙ্গে ছিলেন অন্যান্য প্রদেশ নেতৃত্ব। বৈঠকের উপপাদ্য বিষয় ছিলো, ধনপুর ও বক্সনগর কেন্দ্রে বিনা শর্তে কমিউনিস্টদের সমর্থন করা। প্রদেশ সভাপতি আশীষ কুমার সাহার এই প্রস্তাব নস্যাৎ করে দেয় সোনামুড়া কংগ্রেস নেতৃত্ব।বরং তারা প্রদেশ নেতৃত্বের উপর পাল্টা শর্ত আরোপ করেন।প্রদেশ নেতৃত্ব ও সোনামুড়া কংগ্রেস নেতৃত্বের বৈঠকে কি হয়েছিল?


সোনামুড়া কংগ্রেস নেতৃত্ব স্পষ্টভাবে বৈঠকে প্রদেশ নেতৃত্বকে  জানিয়ে দিয়েছে, “আসন্ন উপ নির্বাচনে বক্সনগর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী না দিলে, এই মহকুমা থেকে কংগ্রেসের সাইনবোর্ড তুলে নেওয়ার জন্য। এবং  ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কমিউনিস্ট নেতা মানিক সরকার বা সুবল রুদ্রকে প্রার্থী না করলে তারা বামেদের ভোট দেবে না বলেও হুলিয়া জারি করেছেন।”

বক্সনগরে কংগ্রেসের মুখ।।

প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ভেবেছিলেন,তারা যা বলবেন সোনামুড়ার নেতৃত্ব তাই করবেন। কিন্তু না, প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের কোন কথাই কর্ণপাত করেননি স্থানীয় নেতৃত্ব। বরং তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি জিহাদ ঘোষণা করেছেন। আর তাতেই উপভোটের বাজারে খানিকটা এগিয়ে থেকেই ইনিংস শুরু করবে শাসক দল বিজেপি।


সোনামুড়া কংগ্রেস নেতৃত্ব বামেদের জন্য ধনপুরকে ছেড়েই দিয়েছিল। কারণ ধনপুর বামেদের ভিয়েতনাম। এখানে কংগ্রেস কখনো দাত বসাতে পারেনি। ২৩- র নির্বাচনে রেকর্ড ব্রেক করেছিলেন বিজেপির প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক।
       স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের পাখির চোখ ছিলো বক্সনগর কেন্দ্রটি। এই কেন্দ্রে বরাবর বামেদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে কংগ্রেস। ১৯৭২,১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে তিন বার বিধানসভা নির্বাচনে বক্সনগর থেকে জয়ী হয়েছিলো কংগ্রেস। ৭২ সালে কংগ্রেসের বিধায়ক হয়েছিলেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা মুনসুর আলী এবং ৮৮ ও ৯৮ সালে বিধায়ক হয়েছিলেন বিল্লাল মিয়া। দুইজনই ভিন্ন সময়ে  কংগ্রেস  মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন।


২৩- র উপ নির্বাচনে বক্সনগর কেন্দ্র থেকে প্রার্থীর দৌড়েছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী বিল্লাল মিয়া। বক্সনগর কেন্দ্রে মুনসুর আলীর পর বিল্লাল মিয়াই কংগ্রেসের মূল মুখ। ১৯৮৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত কংগ্রেসের টিকিটে বিল্লাল মিয়া লড়াই করেছিলেন এই  কেন্দ্র থেকে। স্বাভাবিক কারণেই বক্সনগরে কংগ্রেসের একটা ভালো ভিত রয়েছে। রাজনীতিকদের আশঙ্কা, উপভোটে কংগ্রেস প্রার্থী না দেওয়াতে স্থানীয় ভোট ব্যাংক তার গতি পরিবর্তন করে চলে যেতে পারে বিজেপির দিকেই।


তথ্য বলছে, ১৯- র লোকসভা নির্বাচনে বক্সনগর থেকে বিজেপি, সিপিআইএমকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থানে চলে এসেছিল কংগ্রেস। ২৩ র বিধানসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতার কারণে কেন্দ্রটি বামেদের ছেড়ে দিতে হয়েছিলো।কংগ্রেসের সমর্থনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলো সিপিআইএম। বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কর্মীরা বামেদের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখেছিল। তাই তারা ভোট দিয়েছিল সিপিআইএমকে। অকাল ভোটে কংগ্রেস নেতা – কর্মী ও সমর্থকদের সামনে ক্ষমতায় আসার কোনো স্বপ্ন নেই। স্বাভাবিক ভাবেই তারা এখন আগামী পাঁচ বছরের কথা চিন্তা করে ইভিএমে পদ্ম ফুল চিহ্নের বোতামেই টিপ দেবেন বলে ধারণা খোদ কংগ্রেস নেতৃত্বের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *