ডেস্ক রিপোর্টার, ১৫ আগস্ট।।
           ১৯৭২ থেকে ২০২৩।
    দীর্ঘ ৫১ বছর। এই সময়ের মধ্যে বক্সনগর কেন্দ্রে মোট ১১বার বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৩- র অকাল ভোটে অনুষ্ঠিত হবে ১২তম বিধানসভা নির্বাচন।  ১১ বার বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে নয় বার জয়ী হয়েছে  কমিউনিস্টরা। দুইবার বক্সনগর কেন্দ্র দখল নিতে পেরেছে কংগ্রেস। ১৮ ও ২৩ এর বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের মূল প্রতিপক্ষ ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি ।কিন্তু ভাজপাও জয়ের মুখ দেখতে পারেনি। ২৩ এর উপ নির্বাচনে ভাজপার কাছে রয়েছে বক্সনগর জয়ের হাতছানি। তবে শাসক দল বিজেপির প্রার্থী নিয়ে চলছে ইদুর দৌড়।বক্সনগর কেন্দ্রে বিজেপি এবার কাকে প্রার্থী করবে? স্থানীয় কোন নেতাকে, নাকি বহিরাগতকে। এই প্রশ্ন নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।


বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক তথ্য বলছে ১৯৭২ সালে এই কেন্দ্রে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন মুনসুর আলী এবং সিপিএম প্রার্থী ছিলেন ফনী ভূষণ ভক্ত। দুজনেই ছিলেন বক্সনগর কেন্দ্রের স্থায়ী বাসিন্দা। এই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী মুনসুর আলী। ৭৭ নির্বাচনে বক্সনগর কেন্দ্রটি দখল নিয়েছিলো সিপিআইএম। বাম শিবিরের প্রার্থী ছিলেন আরবের রহমান। এবং কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন মুনসুর আলী। জয়ী হয়েছিলেন বাম প্রার্থী আরবের রহমান। তিনিও ছিলেন বক্সনগর কেন্দ্রের স্থায়ী বাসিন্দা ।


১৯৮৩ বিধানসভা নির্বাচনেও মূল লড়াই হয়েছিল আরবের রহমান ও মুনসুর আলীর মধ্যে। জয়ী হয়েছিলেন বাম প্রার্থী আরবের রহমান। ১৯৮৮ সালে আসনটি দ্বিতীয়বারের মতো দখল করেছিল কংগ্রেস। প্রার্থী ছিলেন বিল্লাল মিয়া। তিনি পরাজিত করেছিলেন বাম প্রার্থী আরবের রহমানকে। কংগ্রেস প্রার্থী বিল্লাল মিয়াও ছিলেন বক্সনগরের স্থানীয় বাসিন্দা। ১৯৯৩ সালে বক্সনগর কেন্দ্রটি দখল করেছিল বামেরা। প্রার্থী ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সহিদ চৌধুরী। তিনি পরাজিত করেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী তেহারা বেগমকে। সহিদ চৌধুরী ও তেহারা বেগম উভয়েই ছিলেন বক্সনগর কেন্দ্রের স্থায়ী বাসিন্দা।


১৯৯৮ থেকে ২০১৩ র বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত এই কেন্দ্রে বাম প্রার্থী ছিলেন সহিদ চৌধুরী এবং কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন বিল্লাল মিয়া।প্রতিটি নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন বাম প্রার্থী সহিদ চৌধুরী। ২০১৮ র বিধানসভা নির্বাচনে বক্সনগর কেন্দ্রে বামেদের মূল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে ভারতীয় জনতা পার্টি। নির্বাচনে বামেদের প্রার্থী ছিলেন সহিদ চৌধুরী এবং বিজেপির প্রার্থী ছিলেন কৃষি বিজ্ঞানী বাহারুল ইসলাম মজুমদার।
 


এক্ষেত্রে বাহারুল ইসলাম মজুমদার ছিলেন বহিরাগত। মূলত তিনি ছিলেন আগরতলার বাসিন্দা । তবে জন্মসূত্রে তিনি বক্সনগরের। তিনি ছিলেন ১৯৭২ এর নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হওয়া কংগ্রেস প্রার্থী মনসুর আলী ছেলে।মুনসুর আলী রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন। বক্সনগরে ২৩এর বিধানসভা নির্বাচনেও মূল লড়াই হয়েছিল কমিউনিস্ট ও বিজেপির মধ্যে। বাম প্রার্থী ছিলেন শামসুল হক এবং বিজেপির প্রার্থী ছিলেন তফাজ্জল হোসেন। উভয়ই স্থানীয় বাসিন্দা।


২৩ এর অকাল ভোটে বক্সনগর কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী কে হবেন? তা নিয়ে চলছে জোর চর্চা। প্রার্থীর দৌড়ে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপি নেতা তফাজ্জল হোসেন। আগরতলার বাসিন্দা তথা প্রদেশ বিজেপির সাধারন সম্পাদক জসীম উদ্দিন। ও ধনপুরের বাসিন্দা তথা বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি শাহ আলম। সিপাহীজলা জেলার সভাপতি দেবব্রত ভট্টাচার্য। তিনি সোনামুড়ার  বাসিন্দা।


১৯৭২ থেকে ২০২৩ এর বক্সনগর কেন্দ্রের বিধানসভা নির্বাচনের তথ্য ঘাটলে দেখা যায়, প্রধান দুই প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীরা ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা।এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। শুধু মাত্র ১৯৭২ সালে বামেরা এই কেন্দ্রে হিন্দু প্রার্থী ফনী ভূষণ ভক্তকে টিকিট দিয়েছিল। বহিরাগত হিসাবে বিজেপি ১৮ সালে বহারুল ইসলাম মজুমদারকে দিয়েছিলো টিকিট।তবে জন্ম সূত্রে বাহারুল ছিলেন বক্সনগরের।


বক্সনগর কেন্দ্রের রাজনৈতিক ইতিহাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে রাজনীতিকরা বলছেন, এবারও বাম ও বিজেপি উভয় দল স্থানীয় প্রার্থীর দিকেই ঝুঁকছে। বাম – কংগ্রেস ও মথা এক জোট হলেই প্রাধান্য পাবে স্থানীয় প্রার্থীই।স্বাভাবিক ভাবেই ভারতীয় জনতা পার্টিও স্থানীয় নেতাকে প্রার্থী করেই নামবে নির্বাচনী লড়াইয়ে। অবশ্যই উভয় শিবিরের প্রার্থী হবেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। কারণ এই কেন্দ্রে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩হাজার সত্তর জন।


তার মধ্যে ২৫ হাজারের অধিক সংখ্যালঘু ভোট।১৪ হাজার হিন্দু ভোট এবং তিন হাজার জনজাতি ভোট।স্বাভাবিক ভাবেই কোনও রাজনৈতিক দলই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা ব্যতীত অন্য কোনো সম্প্রদায়ের নেতাকে প্রার্থী করে ঝুঁকি যে নেবে না, এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই রাজনীতিকদের কথায়,বিজেপি ও বিরোধী শিবিরের প্রার্থী যে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হবে এটা প্রায় নিশ্চিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *