
*উদ্ধার দুইটি দেশী বন্দুক
*আটক দুই যুবক
*পুলিশের তদন্তে পর্দা ফাঁস
*পরে নির্দোষ দুই যুবকের মুক্তি।
ডেস্ক রিপোর্টার,আগরতলা।।
পশ্চিম ডলুছড়া। ধলাই জেলার কমলপুর মহকুমার সালেমার প্রান্তিক গ্রাম। বাঙালি অধ্যুষিত গ্রামটি বরাবর স্পর্শ কাতর। এই গ্রামের বুকে বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ঝরেছে তাজা রক্ত! বিভিন্ন সময়ে খুন হয়েছেন গ্রামের ৩৭ জন বাসিন্দা। আজও পশ্চিম ডলুছড়া গ্রামটি ষড়যন্ত্রকারীদের কু – নজরে পড়ে আছে। এই গ্রাম থেকে বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ হওয়া পরিবার গুলির ফেলে যাওয়া জমি আগেই হরণ করে নিয়েছে জনজাতি সম্প্রদায়ের দুষ্কৃতীরা। আজও বহাল তাদের কার্য্য কলাপ। জনজাতি সম্প্রদায়ের দুষ্কৃতীদের কার্যকলাপের প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর কারসাজি করে থাকে জাতি-বিদ্বেষের বীজ ছড়ানো ষড়যন্ত্রকারীরা।
সম্প্রতি পশ্চিম ডলুছড়ার গ্রামবাসীদের কিছু জমি জবর দখল করেছিলো জনজাতি দুষ্কৃতীরা। তারা বাঙালি গ্রামবাসীদের টাক্কাল উঁচিয়ে এসেছিল হত্যার উদ্দেশ্যে। এই ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীরা সালেমা থানায় মামলা দায়ের করেছিলো।বিষয়টি জানানো হয়েছিল রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে। এই সংক্রান্ত খবর সর্ব প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল “জনতার মশাল” ওয়েব পোর্টালে। মামলা দায়ের করার পরও পুলিশ প্রাথমিক ভাবে বিশেষ একটা গুরুত্ব দেয় নি।

পশ্চিম ডলুছড়ার গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, তাদের এই সংক্রান্ত সমস্যার কথা “জনতার মশাল” ওয়েব পোর্টালে প্রকাশের পরই টনক নড়ে গোটা আরক্ষা প্রশাসনের। সালেমা থানার পুলিশ ছুটে যায় গ্রামে। তারা কথা বলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে তারা জনজাতি দুষ্কৃতীদের ডেকে আনার পরিকল্পনা নেয়। এই সময়েই ষড়যন্ত্রকারীরা রচনা করে ভয়ঙ্কর স্ক্রিপ্ট। আইনী ভাবে পশ্চিম ডলুছড়ার প্রতিবাদী বাঙালিদের গড্ডায় ফেলতে তৈরি করে ব্লু প্রিন্ট।

গ্রামবাসীদের কথায়, বৃহস্পতিবার রাতে অচমকা সালেমা থানার পুলিশ গ্রামের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মানিক নাথের বাড়িতে আসে। সঙ্গে কিছু জনজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন। পুলিশ মানিক নাথের বাড়িতে এসে দাবি করে, ” এই বাড়িতে অস্ত্র মজুত আছে, তাই তারা তল্লাসি করবে”। সেই অনুযায়ী পুলিশ মানিক নাথের বাড়িতে চিরুনী তল্লাসি করে।তখন বাড়ির একটি অংশ একটি ব্যাগ উদ্ধার হয়। এই ব্যাগের মধ্যেই ছিলো দুইটি দেশী বন্দুক। মূলত ব্যাগটি ছিলো মানিক নাথের বাড়িতে নব নির্মিত দালান ঘরের পাশ থেকে। পুলিশ বন্দুক উদ্ধার করে মানিক নাথের দুই ছেলে দেবাশিষ নাথ ও শুভজিৎ নাথকে সালেমা থানায় নিয়ে আসে। রাত ভর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এবং পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে রাতেই তদন্ত শুরু করে। সালেমা থানার পুলিশের তদন্তের আতশ কাঁচের নিচে ফুটে উঠে গভীর ষড়যন্ত্র ও ষড়যন্ত্রকারীদের চেহারা।

অনুসন্ধানকারী পুলিশ বুঝতে পারে নাথ বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া দেশী বন্দুক গুলি এই বাড়ির সদস্যরা মজুত করে নি। বৃষ্টি ভেজা রাতে বাড়ির নির্জনতার সুযোগ নিয়ে বন্দুক গুলি ষড়যন্ত্রকারীরা মজুত করে।তাদের উদ্দেশ্য প্রতিবাদী মানিক নাথ ও তার ছেলেদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো। সালেমা পুলিশের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। তার প্রথম কারণ, বৃহস্পতিবার দিনভর বৃষ্টি ছিলো গোটা রাজ্য সহ পশ্চিম ডলুছড়াতে। এই অবস্থায় মানিক নাথের বাড়ির খোলা আকাশ থেকে উদ্ধার হওয়া বন্দুকের ব্যাগটি বৃষ্টি জল ছিল না। অর্থাৎ ব্যাগটি ভেজে নি।

আর তাতেই পুলিশের কাছে ষড়যন্ত্রের গন্ধ আরোও তীব্র হয়। পরিষ্কার হয়ে যায় ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য। সালেমা থানা পুলিশের তদন্তে আতস কাঁচের নিচে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পরেই পুলিশ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মানিক নাথের দুই ছেলে দেবাশিষ ও শুভজিতকে ছেড়ে দেয়। পুলিশ ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য পাল্টা জাল বিস্তার করে তবে সালেমা থানার পুলিশের এই তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রশংসা করে পশ্চিম ডলুছড়ার মানুষ।পুলিশের সুষ্ঠ তদন্তের কারণে বেঁচে যায় দুই নির্দোষ বাঙালি যুবক।