কল্লোল রায় কমিউনিকেশনের এসপির দায়িত্ব নিয়েই নতুন ফরমান জারি করেন। তাও আবার সমস্ত নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে। তিনি নির্দেশ জারি করে জানিয়ে দেন, এখন থেকে কমিউনিকেশনের আধিকারিক ও কনস্টেবলদের আইন – শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত করা হবে।সেই অনুযায়ী তাদেরকে আইন – শৃঙ্খলার কাজে রোজ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডেস্ক রিপোর্টার, ৪ফেব্রুয়ারি।। সমস্ত নিয়ম – নীতিকে কুলুঙ্গিতে তুলে রাজ্য পুলিশের বেতার বিভাগের কর্মীদের আইন – শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত করেছেন “কমিউনিকেশন এসপি” কল্লোল রায়। এটা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। দাবী পুলিশের বেতার বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল ও আধিকারিকদের। এসপির এই অনৈতিক সিদ্ধান্তে ফুঁসছে বেতার বিভাগের কর্মীরা। রাজ্য পুলিশের বেতার বিভাগকে বলা হয়ে থাকে পুলিশের যোগাযোগের “প্রাণ ভোমরা”। পুলিশের সমস্ত গোপন বিষয়গুলি বেতার বিভাগের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বেতার বিভাগের জন্য রয়েছে পৃথক এসপি, ডিএসপি , ইন্সপেক্টর, সাব – ইন্সপেক্টর, অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর।কনস্টেবলদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই বিভাগের পাঠানো হয়ে থাকে কাজের জন্য।তাদের কাজ মূলত পুলিশের বেতার সংক্রান্ত যোগাযোগের জন্য। এই বিভাগের পুলিশ আধিকারিকরা মূলত বিশেষ কোর্স করেই চাকরিতে যোগ দিতে হয়। তারা পুরোপুরি ভাবে পুলিশের একটি টেকলিকেল উইংস। বেতার বিভাগকে কেন্দ্র করেই তাদের কাজকর্মের গণ্ডি। সাধারন আইন – শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদেরকে মোতায়েন করা হয় না। এবং সার্ভিস রুলসেও স্পষ্ট ভাবে একথা উল্লেখ রয়েছে।
পুলিশের বেতার বিভাগের পুলিশ কর্মীদের বিএনএসএস সংক্রান্ত বিষয়ে কতটা ধারণা আছে?
বেতার বিভাগের কর্মীদের বক্তব্য, কল্লোল রায় কমিউনিকেশনের এসপির দায়িত্ব নিয়েই নতুন ফরমান জারি করেন। তাও আবার সমস্ত নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে। তিনি নির্দেশ জারি করে জানিয়ে দেন, এখন থেকে কমিউনিকেশনের আধিকারিক ও কনস্টেবলদের আইন শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত করা হবে।সেই অনুযায়ী তাদেরকে আইন – শৃঙ্খলার কাজে রোজ ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত আইন- শৃঙ্খলার কাজ দেখে থাকে থানা পুলিশ।তাদের আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে।ভারতীয় ন্যায় সংহিতা সম্পর্কে থানা পুলিশকে ট্রেনিং দেওয়া হয়। কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় তারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে তারা পুলিশকে। কিন্তু পুলিশের বেতার বিভাগের কর্মীদের এই সংক্রান্ত কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না।
রাজ্যের আইন – শৃঙ্খলা যদি খুব অবনতি হয়, বা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয় তবেই বেতার বিভাগের লোকজনকে তাদের এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।রাজ্যে এই মুহূর্তে তেমন কোনো পরিস্থিতি নেই।অথচ এই মুহূর্তে এসপি কল্লোল রায়ের নির্দেশে বেতার বিভাগের কর্মীদের ট্রাফিকের কাজ সহ আইন – শৃঙ্খলার কাজে ব্যবহার করছে আরক্ষা দপ্তর। এই কাজ করতে গিয়ে অনভিজ্ঞতার কারণে নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কমিউনিকেশনের পুলিশ কর্মীদের। ইতিমধ্যে বেতার বিভাগের দুই পুলিশ কর্মী ওয়ারলেস অপারেটর লিটন দাস ও সমীর সূত্রধর অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন।সবটাই তাদের অনভিজ্ঞতার কারণে।
এই বিভাগের অফিসারদের নেই কোনো রিফ্রেসার। লাঠি বা অস্ত্র চালানো প্রশিক্ষণও তেমন নেই। এই সব ক্ষেত্রে তাদেরকে অদক্ষ বলা চলে।
এসপি কমিউনিকেশনের ওয়ারলেস অপারেটরদের বড় অংশ অবসরে চলে গিয়েছেন।আবার কেউ কেউ অবসরের দোরগোড়ায়। কর্মী স্বল্পতা রয়েছে খোদ বেতার বিভাগেই।তারপরও এসপি কল্লোল রায় বেতার বিভাগের কর্মীদের এক প্রকার জোর করে আইন – শৃংখলার কাজে মোতায়েন করছেন। বেতার বিভাগের অধিকাংশ কর্মী “ওয়ারলেস অপারেটর”। তাদের কাজ ঘরে। এই বিভাগের অফিসারদের নেই কোনো রিফ্রেসার। লাঠি বা অস্ত্র চালানো প্রশিক্ষণ নেই তাদের। তারা চাকরিতে যোগ দিয়ে মাত্র তিন মাসের ট্রেনিং করেছিলেন, এই টুকুই।তা সত্ত্বেও বেতার বিভাগের অধিকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ছোট অস্ত্র। তারা শেষ বার কবে হাতিয়ার স্পর্শ করেছিল, এটা ভুলেই গিয়েছেন।
।।প্রতীকী ছবি।।
এই কারণেই প্রচন্ড ক্ষোভে জ্বলছে রাজ্য পুলিশের এসপি কমিউনিকেশনের কর্মীরা। হতে পারে বিস্ফোরণও।
এই পরিস্থিতিতে এসপির নির্দেশে তাদেরকে এখন অস্ত্র হাতে নিয়ে ডিউটি করতে হচ্ছে। এটা কোনো ভাবেই ওয়ারলেস অপারেটরদের চাকরির এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এই কারণেই প্রচন্ড ক্ষোভে জ্বলছে রাজ্য পুলিশের এসপি কমিউনিকেশনের কর্মীরা। এসপি কল্লোল রায় নিজেও বাম জামানায় টিএসআরের একশ নম্বরী অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডার ছিলেন। পরবর্তী সময়ে পদোন্নতি পেয়ে কমান্ডেন্ট হয়েছে ( এসপি স্তরের পোস্ট)।স্বাভাবিক ভাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা সহ ভারতীয় আইন সম্পর্কে তিনি কতটা ওয়াকিবহাল? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন খোদ বেতার বিভাগের কর্মীরাই।