আগরতলা, ১৮ জুন।।
         বিকশিত ত্রিপুরা-২০৪৭ শুধুমাত্র সরকারের লক্ষ্য নয়, এটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। যেখানে রাজ্যের প্রতিটি নাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২২-২০৪৭ পর্যন্ত দেশের সময়কালকে অমৃতকাল হিসাবে ঘোষণা করেছেন। ২০৪৭-র মধ্যে দেশকে বিকশিত ভারত হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। সবগুলি রাজ্যের মিলিত অবদানের মাধ্যমেই ভারত এই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। সেইক্ষেত্রে বিকশিত ত্রিপুরা-২০৪৭ গড়ে তোলা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আজ সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহার সভাপতিত্বে ‘বিকশিত ত্রিপুরা-২০৪৭’ শীর্ষক আয়োজিত বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের সচিব সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী একথা বলেন।
        মুখ্যমন্ত্রী বলেন বিকশিত ত্রিপুরা ২০৪৭-এ রাজ্যকে বিকশিত রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিটি দপ্তরকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। দপ্তরের পরিকল্পনাগুলিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে এবং মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেন। সেইক্ষেত্রে দপ্তরগুলির নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব যেন না হয় সেই বিষয়টির উপরও দৃষ্টি আরোপ করেন। মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের উদ্দেশ্য বলেন, প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর দপ্তরগুলিকে নিজেদের কাজের মূল্যায়ণ করা প্রয়োজন এবং লক্ষ্য রাখা যে দপ্তরগুলি কর্মপরিকল্পনা রাজ্যে জিএসডিপি’র উপর কিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন, ক্যুইন আনারসকে বিশ্বমুখী করে তোলা, কাঁঠালের উৎপাদন বৃদ্ধি, আগর শিল্পের প্রসার, রাবার শিল্পের প্রসার, কৃষিজ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ইত্যাদির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি কৃষি ক্ষেত্রে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করার কথাও উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন এতে কৃষিজ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি কৃষকদের আয়ও বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন রাজ্যের বনজ সম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে তা রাজ্য অর্থনীতির উপর বিরাট প্রভাব ফেলবে।
মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়নে উদ্ভাবনী চিন্তাধারা নিয়ে আসার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি আশা ব্যক্ত করেন এতে কম সময়ে অধিক ফল পাবার বিরাট সুযোগ থাকে। পাশাপাশি জনগণও প্রকল্পগুলির সুফল পেতে পারবে। এছাড়াও বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান, গুণমান সম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, নগরায়ন, পর্যটন কেন্দ্রগুলির উন্নয়ন, শিল্প বিনিয়োগ ইত্যাদি উপরও জোর দেওয়ার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী পেপারলেস অফিস চালুর উপর আরও বেশি করে মনোনিবেশ করার জন্য উপস্থিত আধিকারিকদের বলেন। আলোচনাকালে মুখ্যমন্ত্রী তথ্য ও প্রযুক্তি, সুশাসন, মহিলাদের স্বনির্ভরতা, যুবক ও আগামী প্রজন্মের সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ গড়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রান্তিক এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা আরও অধিক পরিমাণে পৌঁছানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে উন্নত ও শ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসাবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য বিকশিত ভারত-২০৪৭ তখনই সুপ্রতিষ্ঠিত হবে যখন প্রতিটি রাজ্য সহ ত্রিপুরাও এই প্রগতিতে অংশগ্রহণ করবে।

বৈঠকে আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজ্য মুখ্যসচিব জে. কে. সিনহা বলেন, বিকশিত ত্রিপুরা ২০৪৭-এর লক্ষ্য ত্রিপুরাকে নিজের পরিবার ভেবে গড়ে তোলার চিন্তা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই উন্নত ত্রিপুরা গড়ে তোলার সম্ভব হবে। সবকটি দপ্তরকে একটি সঠিক লক্ষ্যমাত্রা রেখে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি সুস্থ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির উপরও নজর দিতে হবে। মুখ্যসচিব বিভিন্ন দপ্তরের সচিবদের উদ্দেশ্য বলেন, রাজ্যের সম্পদ যত বেশি সম্ভব ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে। রাজ্যের অর্থ যেন বাইরে না যায় সেই বিষয়ে সজাগ দৃষ্টিভঙ্গি রাখা প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যসচিব, উদ্ভাবনি চিন্তাধারা প্রয়োগ, আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন, শিক্ষার গুণমান বাড়ানোর উপর মনোনিবেশ, শিল্প বিনিয়োগে সুযোগ সৃষ্টি করা, কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি, অর্থায়নে উদ্ভাবনী ধারনা প্রয়োগ, কৃষিক্ষেত্রে উপর গুরুত্ব বাড়ানো, জনগণকে কৃষি কাজে অনুপ্রাণিত করা ইত্যাদির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানের ত্রিপুরা উন্নয়নের গতি খুবই লক্ষ্যনীয়। এই ধারা সঠিকভাবে বজায় থাকলে বিকশিত ত্রিপুরা ২০৪৭-র লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
        আজকের এই পর্যালোচনার সভায় পরিকল্পনা দপ্তরের সচিব এল টি ডার্লং বিকশিত ত্রিপুরা-২০৪৭ এর উপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সভায় বনদপ্তরের প্রধান সচিব আর. কে. সামাল, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, নগরোন্নয়নে দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, রাজস্ব দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, কৃষি দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, পর্যটন দপ্তরের সচিব ইউ কে চাকমা সহ বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *