ডেস্ক রিপোর্টার, ১১জুলাই।।
         ৭জুলাই ২০১১ থেকে ৭জুলাই ২০২৩।দীর্ঘ ১২ বছর।অর্থাৎ এক যুগ। হদিশ নেই রাজধানী থেকে খোয়া যাওয়া ইনসাস রাইফেলের ম্যাগজিনের।তাজা বুলেট সহ ম্যাগজিনটি কোথায়?উত্তর নেই রাজ্য আরক্ষা প্রশাসনের কাছে।
     ২০১১ সালের ৭জুলাই,রাজ্যের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা।৭জুলাইয়ের বীভৎসতা এখনো নাড়া দেয় রাজ্যের মানুষকে। মুহূর্তেই রাজধানীতে শুরু হয়েছিল বুলেট বৃষ্টি। রক্তস্নাত হয়েছিলো রাজপথ। বুলেটের আঘাতে ঝরেছিল তরতাজা যুবক পাপাই সাহার প্রাণ। বুলেটের আস্ফালনে আজও পঙ্গু বেশ কয়েকজন নাগরিক।বুলেট বিদ্ধ হয়েছিলেন কর্তব্যরত টিএসআর জওয়ান। আগুনে পুড়ে ছিলো পুলিশের গাড়ি।রাস্তার পাশে সারি বদ্ধ ভাবে থাকা নাগরিকদের মোটর বাইক। শহরের পশ্চিম থানা দখল নিয়েছিলো রাজ্যের মেজর  স্ট্রাইকিং ফোর্স। থানার ভিতরেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন ওসি। বীভৎসতা কোন পর্যায়ে ছিলো, তা বুঝার জন্য এই খন্ড চিত্র যথেষ্ট।এতো কিছুর মধ্যেই ঘটে গিয়েছিল আরো একটি বড় কাণ্ড। যা চাপা পড়ে গিয়েছিল খুব সহজেই।যদিও তদন্তের ভার ছিল সিআইডির হাতে।কিন্তু আজ পর্যন্ত অনুসন্ধান কারী সিআইডি কোনো সুরাহা করতে পারে নি। গোটা ঘটনা আজও এক রহস্য হয়ে থেকে গেলো।

।।বিজ্ঞাপণ।।

২০১১সাল, রাজ্যে ভর বাম জামানা। ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজের আসন কেলেঙ্কারি নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্ব।আন্দোলনের মূল হোতা ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দল নেতা তথা হালের মন্ত্রী রতন নাথ। সঙ্গে গোটা কংগ্রেস ব্রিগেড।যাদের সিংহ ভাগ আজ বিজেপি। হালের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী,বিজেপি নেতা সুবল ভৌমিক, বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন,গোপাল রায়, কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহারা ছিলেন আন্দোলনের অগ্রভাগে। গোটা আন্দোলনের সলতে পাকানো হয়েছিল তার আগের দিন।অর্থাৎ ১০জুলাই। এদিন বাম পুলিশের হাতে প্রচন্ড বেত্রাঘাত সহ্য করতে হয়েছিলো কংগ্রেস নেতা – কর্মীদের।


১১জুলাই যখন শহরের পোস্ট অফিস চৌমুহনী রণক্ষেত্র, তখনই টিএসআর জওয়ান তথা তৎকালীন বিরোধী দল নেতা রতন লাল নাথের দেহরক্ষীর নারায়ণ দাসের কাছে থাকা ইনসাস রাইফেলের ম্যাগজিন খোয়া যায় রহস্য জনক ভাবে। ম্যাগজিনে দুইটি পার্টিশনে ছিলো পঞ্চাশটি তাজা কার্তুজ। কে বা কারা জওয়ানের ম্যাগজিন নিয়েছে? কিভাবে নিয়েছে? আজও উন্মোচন হয় নি সেই রহস্য। অদ্ভুদ ভাবে স্বরাষ্ট্র দপ্তরে চাপা আছে সেই ফাইল।
 


মাগজিনটি কাপড়ের পাউচের ভিতরে থাকা অবস্থায় বাধা ছিল জওয়ানের কোমরের সঙ্গে বাধা ছিলো। এই ভাবেই জওয়ানরা ম্যাজগিন বহন করে। এটা যেকোনো জওয়ানের সঙ্গে থাকা অস্থায়ী বুলেট মজুত ভান্ডার। কাপড়ের পাউচটি কোমরের সঙ্গে এমন ভাবে বাঁধা থাকে, তা মাটিতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।কেউ যদি জওয়ানের ম্যাগজিনের পাউচে ধরে টানও দেয় তাহলেও পড়ার সম্ভাবনা নেই। আর তখন জওয়ান নিশ্চিত ভাবে এর প্রতিবাদ করবেন।কিন্তু এমনটাও কিছু ঘটে নি।
  তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় ম্যাগজিনটি সেদিন জওয়ানের কোমড় থেকে খসে পড়ে গিয়েছিল,তাহলেও তা পাওয়ার কথা ছিল।কেননা সাধারণ আন্দোলনকারী পক্ষে বুলেট ভর্তি ম্যাগাজিন নেওয়ার কোন প্রশ্নই নেই।


এদিন শহরে ছিলো না কোনো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা।তাহলে কোথায় গেলো টিএসআর জওয়ানের খোয়া যাওয়া ম্যাগজিন? টিএসআর জওয়ানদের গুলি কাণ্ডের পর  শুনশান  হয়ে গিয়েছিল শহর। পুলিশ ব্যতীত ছিলো না কাক পক্ষীও। গোটা শহর ছিলো নিরাপত্তা রক্ষীদের দখলে।সন্ধ্যায় শহরে হয়েছিলো মশুল ধারে বৃষ্টি। পরের দিন ভোরেই রাস্তা পরিষ্কার করতে হাত লাগিয়েছিল পুরসভার সাফাই কর্মীরা। তারা  রাজপথে পড়ে থাকা ইট পাটকেল কুড়িয়ে নিয়েছিল। পুরসভার সাফাই কর্মীদের হাতেও লাগেনি তৎকালীন বিরোধী দলনেতা রতন লাল নাথের দেহরক্ষী টিএসআর জওয়ান নারায়নের খোয়া যাওয়া কার্তুজ ভর্তি ম্যাগজিনটি।

।।জওয়ানের হাতে ইনসাস রাইফেল।।(ফাইল ছবি)

১১ জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর রাজধানীর পশ্চিম থানায় বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। স্বত: প্রণোদিত ভাবে। তার মধ্যে জওয়ানের ম্যাগজিন খোয়া যাওয়া মামলাটিও ছিলো। পৃথকভাবে এই ঘটনার  ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত হয়েছিলো। পরবর্তী সময় গুরুত্ব বুঝে পশ্চিম থানা থেকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সিআইডিকে। সিআইডি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েই টিএসআর জওয়ান নারায়নকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কি পেয়েছিল সিআইডি ? আজও জানতে পারিনি রাজ্যের মানুষ। পরবর্তী সময়ে টিএসআর জও য়ান নারায়ণকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।যদিও মামলা চলাকালীন সময়েই  আরক্ষা দপ্তর পুনরায় তাকে চাকরিতে জয়েন করিয়ে নিয়েছিলো।


আজও প্রশ্ন তৎকালীন ও কমিউনিস্ট সরকার কার স্বার্থে গোটা ঘটনা ধাপা চাপা দিয়েছিল? পর্দার অন্তরালে কি ছিলো রহস্য। কাকে পাড় পাইয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মনিক সরকার? তৎকালীন বিরোধী দলনেতা রতন লাল নাথ, হালে মন্ত্রিসভার সদস্য। সিআইডিকে খোল নলচে বদলে দিয়ে করা হয়েছে স্বপ্নের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। বর্তমান সময়ে মন্ত্রী রতন লাল নাথও কেন নিশ্চুপ? প্রশ্ন উঠছে জনমনে। মন্ত্রী দেবেন কি উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *