রাজধানীতে আইনজীবী প্রদীপ মোদক হত্যাকাণ্ডের ২৯মাস পরও অধরা তার খুনিরা। পুলিশ আজ পর্যন্ত আইনজীবী হত্যাকারীদের জালে তুলতে ব্যর্থ। আইনজীবী প্রদীপ মোদক হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরলেও পুলিশ তাদের কেশাঘ স্পর্শ করতে পারেনি। সবচেয়ে অবাক করার ঘটনা আইনজীবী হত্যা কাণ্ডের প্রায় আড়াই বছর হলেও খুনিরা নাগালের বাইরে।তাহলে সাধারণ খুনের ঘটনার তদন্তে গতি প্রক্রিয়া কি হবে ? এটা সহজেই অনুমেয়।

২০১৮-র ২৯ নভেম্বর।আনুমানিক ভোর সাড়ে চারটা।

রাজধানীর উজান অভয়নগর,নিজ বাড়িতে খুন হয়েছেন আইনজীবী প্রদীপ মোদক।

ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন প্রদীপ মোদকের দুই বোন।এক জন প্রদীপ মোদকের ছোট।তিনি জবা মোদক।তিনি বিবাহিত।তবে স্বামী পরিত্যাক্তা,এক সন্তানের জননী।অপর জন প্রদীপ মোদকের দিদি।দিদি ও বোনকে নিয়েই ছিল আইনজীবী প্রদীপ মোদকের সুখের সংসার।উপার্জনের উৎস প্রদীপ মোদক নিজেই।তিনি আদালতে অধিকাংশ সময় সিভিল মামলা লড়তেন।আইনজীবী হিসেবে ত্রিপুরা বারে সুনামও ছিল।জায়গা-জমি সংক্রান্ত মামলায় মক্কেল নেহাৎ কম ছিল না প্রদীপ মোদকের।
আইনজীবী প্রদীপ মোদক খুনের পর তার দিদি
শহরের নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানার মামলা করেছিলেন।মামলার নম্বর ১১০/১৮।পুলিশ ভারতীয় দণ্ড বিধির ৩০২ ধারায় মামলা রুজু করে।

তদন্তে নেমে আইনজীবী প্রদীপ মোদক হত্যাকাণ্ডের মোডাস অপারেন্ডি সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ।জমি সংক্রান্ত লেনদেন কেন্দ্র করেই খুন হন আইনজীবী প্রদীপ মোদক।এইটাই খুনের মূল মোডাস অপরেন্ডি।দাবি করেছিল অনুসন্ধানকারী পুলিশ।

কারা খুন করেছে আইনজীবী প্রদীপ মোদককে? এই প্রশ্নের উত্তরও পেয়ে যায় তদন্তকারী পুলিশ।হত্যাকাণ্ডের ‘সিন অফ ক্রইম ‘ থেকে তদন্তকারী পুলিশের কাছে স্পস্ট হয়ে গিয়েছিল, “বাহিরাগত গুন্ডারা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে।”

কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হয়েছে?

প্রদীপ মোদক তো ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন।বহিরাগত সুপারি কিলাররা তো তাহলে ঘরে প্রবেশ করে হত্যা করতো। তার জন্য অবশ্যই পেশাদারী খুনীদের প্রদীপ মোদকের ঘরের দরজা ভাঙতে হতো।কিন্তু তাও হয় নি।
বা কেউ দরজার বাইরের দিক থেকে ডাক দিত প্রদীপ মোদককে,ঘরের বাইরে আসার জন্য।

ডাক দেওয়া ব্যক্তি অবশ্যই প্রদীপ মোদকের অতি পরিচিত কাউকে হতে হবে।তবেই ঘর থেকে বের হবেন প্রদীপ মোদক।ঘরের পার্টিশনের অপর পাশে থাকতো তার দুই বোন।
তাই,দরজার বাইরে থেকে প্রদীপকে কেউ ডাক দিল অবশ্যই তার বোনেরা শব্দ শুনতে পেতেন।

কিন্তু তারাও কিছু শুনেনি। অবাক করার মত বিষয়।তাহলে প্রদীপ মোদক কিভাবে ঘর থেকে বের হলেন?? এখানে কোন জাদু – মন্ত্র কাজ করেছে। প্রদীপ মোদকের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে তার বাড়ির সাপ্লাইয়ের সামনে থাকা একটি জলের ড্রামে। ঘরের বারান্দার সিলিং-এ টাঙানো ছিলো রক্ত মাখা কাপড়। পুলিশের ধারণা করে, জমদূতরা প্রদীপের বাড়িতে আগেই ঘাপটি মেরে বসে ছিল।প্রদীপ মোদক ঘরে তার পেশাগত কাজ কর্ম সেরে প্রতি রাতেই বাইরে আসতেন। ঘরের বাইরে এসে করতেন ধূমপান।এরপর প্রাকৃতিক কাজ সেরে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন।এটা ছিলো তার প্রতি রাতের রুটিন।খুনিরা প্রদীপ মোদকের এই লাইফ স্টাইল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলো।তিনি যখন অন্যান্য দিনের মত ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন,তখনই খুনিরা সুযোগ বুঝে ঝাপটে পড়েছিল আইনজীবীর উপর।এবং নিস্তব্দ-এ নিকেশ করে পেশাদারী খুনিরা।

প্রথমদিকের পুলিশী তদন্তের কাঁটা কম্পাস খুনির গর্ভগৃহ সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।কিন্তু পুলিশ পরে পেয়ে যায় মূল মাস্টার মাইন্ডের সন্ধান।তারপরও কোনো এক রহস্য জনক কারণে আইনজীবী খুনের মাস্টার মাইন্ডকে পুলিশ জালেই তুলেনি।তাকে রাজ্যন্তরী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলো। তাহলে প্রশ্ন আসবে কে সেই মাস্টার মাইন্ড? তিনি মহারাজগঞ্জ বাজারের একজন ব্যবসায়ী।তার পদবীও “মোদক”। তিনি সম্পর্কে খুন হওয়া প্রদীপ মোদকের বোন জামাই। আইনজীবীর বোনের সঙ্গে তার স্বামীর আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।এরপরও শহরের হকার্স কর্নার সংলগ্ন একটি বাড়ির ভাগ চেয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন আইনজীবীর বোন।এই মামলার কৌশলী ছিলেন প্রদীপ মোদক নিজে। এটাই ছিল প্রদীপ হত্যার অন্যতম কারণ।
পুলিশ যখন খুনির গর্ভ গৃহে গিয়ে পৌঁছায়, তখনই কিন্তু শুরু হয় টাকা ও রাজনীতির খেলা। শেষ পর্যন্ত আইনজীবী প্রদীপ মোদক হত্যা কাণ্ডের মামলা পুরোপুরি ভাবে ” ক্লোজড চাপ্টারে” পরিণত হয়ে যায়। পাড় পেয়ে যায় খুনের মাস্টারমাইন্ড সহ সুপারি কিলাররা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *