ডেস্ক রিপোর্টার,২০ নভেম্বর।।
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আশীষ লাল সিংহ আক্রান্ত হওয়ার ২৪ঘন্টা পরও দলীয় নেতৃত্ব কোনো বিবৃতি দেন নি।তারা মুখে কুলুপ এটে রেখেছেন। প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্বের এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ দলের কর্মী-সমর্থকরা। সুস্মিতা দেব,সুবল ভৌমিকের পর প্রদেশ তৃণমূলের প্রদেশ কমিটিতে তার স্থান।ঘুরিয়ে বললে আশীষ লাল সিংহ সুস্মিতা-সুবল থেকেও দলে সিনিয়র। অথচ আশীষ লাল সিংহ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব ঘটনার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করেন নি।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের বক্তব্য, দলের সাধারণ কর্মীরা আক্রান্ত হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন সুস্মিতা দেব।করেন টুইট। একই অবস্থা তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কৌশলী সংস্থা আই-প্যাকের। অন্যান্য ঘটনার পর আই-প্যাক নানান ভাবে মিডিয়াতে বার্তা পৌঁছে দেয়।টুইট করে তৃণমূলের পেজে।কিন্তু আশীষ লাল সিংহের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার পর রহস্য জনক ভাবে চুপ ঘাসফুল শিবির।
আশীষ লাল সিংহ ধলাই,উত্তর জেলা ও ঊনকোটি জেলার সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন।তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন খোদ দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দলীয় কাজেই থাকেন আগরতলার বাইরে। কিন্তু আশীষ সিংহ আক্রান্ত হওয়ার পর তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই কেন?
তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দর মহলের খবর, ধলাই ও উত্তর জেলাতে অবস্থান করে সাংগঠনিক কাজকর্ম করা সম্ভব হচ্ছিলো না আশীষ লাল সিংহের।কারণ তাকে সংশ্লিষ্ট জায়গাতে তাকে দেওয়া হচ্ছে না হোটেল। তাই আশীষ লাল সিংহকে কৈলাশহরে থাকার ব্যবস্থা করতে হয়েছে একটি হোটেলে।তিনি কৈলাসহর থেকেই আসা-যাওয়া করবেন উত্তর ও ধলাই জেলাতে।
কৈলাসহরের তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য, গত ১৮নভেম্বর রাতে আশীষ লাল সিংহ সাংগঠনিক কাজ সেরে ফিরছিলেন তাঁর হোটেলে।একটি স্করপিও গাড়িতে করে।সঙ্গে ছিলো দলের দুই মহিলা কর্মী স্বর্ণপ্রভা চ্যাটার্জী ও রাখি দেবনাথ। দুই জনকে স্বর্ণপ্রভার বাড়িতে নামিয়ে দেবে বলেই কথা ছিলো।
স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের কথায়,সেই অনুযায়ী, দলের সাংগঠনিক কাজ সেরে আশীষ লাল সিংহ হোটেলে আসার সময় সঙ্গে স্বর্ণপ্রভা ও রাখিকে নিয়ে আসে গাড়িতে করে। স্বর্ণ প্রভার বাড়ি এলাকা বিদ্যানগরে আসার পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কিছু যুবক আশীষের গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেয়।কিন্তু বিপদের আচ বুঝে স্থানীয় নেত্রী স্বর্ণপ্রভা গাড়ি থামাতে বারণ করে চালককে। নির্দেশ মোতাবেক চালক গাড়ি নিয়ে আরো সামনে এগিয়ে যায় পাইতুর বাজারে। সেখানে যাওয়ার পর আশীষ লাল সিংহের গাড়ির সামনে মূল সড়কে একটি বাইক রেখে দেয় দুস্কৃতিরা।তখন চালক বাধ্য হয় গাড়ি থামাতে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী, তখন দুস্কৃতিরা গাড়ি থেকে চালককে নামিয়ে প্রচন্ড মারধর করে।এবং এই গাড়ি সহ আশীষ ও দুই মহিলাকে নিয়ে যায় কৈলাসহর মোটর স্টান্ডের সামনে।সেখানে রাস্তার আশপাশে তিনটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে।তারমধ্যে একটি সিসি ক্যামেরা বিকল। দুস্কৃতিরা এই জায়গাতে নিয়েই আশীষ লাল সিংহকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর শুরু করে।রীতিমত মাটিতে ফেলে আশীষকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে দুস্কৃতিরা।বিপদ বুঝে ভয়ে স্বর্ণপ্রভা ও রাখি পাশের এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়।সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ছুটে যায়।রক্তাক্ত অবস্থায় আশীষ লাল সিংহকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।এবং দুই মহিলাকে নিয়ে যায় থানাতে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আশীষ লাল আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে দলের কোনো স্থানীয় বা বঙ্গ নেতা যান নি আশীষ লাল সিংহকে দেখতে।শুক্রবার দিনভর রাজপথে তৃণমূল কংগ্রেস আন্দোলন করলেও আশীষ লালের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে টু-শব্দ করেন নি দলীয় নেতৃত্ব।
তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনো খোঁজ নেন নি নেতারা।কৈলাসহর থানায় করা হয়নি কোনো মামলা। রহস্যের দানা বাঁধছে দলের মধ্যে।কেউ কেউ আশীষ লাল সিংহের এই ঘটনার পেছনে তৃণামূলের অন্তর কোন্দলকে দায়ী করছে।
কর্মীদের ব্যাখ্যা, আগরতলার বাইরে সুবল ভৌমিক বা সুস্মিতা দেব সংগঠনকে দাঁড় করাতে পারেনি।সোনামুড়াতে সুবল ভৌমিকের অল্প কিছু সংগঠন রয়েছে।সুস্মিতা দেব সবে মাত্র এসেছেন।তিনি এখনো ত্রিপুরাতে নিজের কোনো অনুগামী তৈরি করতে পারেন নি। সেই ক্ষেত্রে শহর ও পাহাড়ে আশীষ লাল সিংহের একটা ভাল সংগঠন রয়েছে।তাঁর সঙ্গে ২০-২২জনের একটা ডিটিকেটেড ফোর্স রয়েছে। আশীষ লাল সিংহের এই সাংগঠনিক ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দলীয় কর্মীরা।
তাঁর সঙ্গে আশীষ লাল সিংহের বাবা ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংহ।আশীষ সামনে চলে আসলে এবং তাঁর বাবার “ব্র্যান্ড ” বাজাতে শুরু করলে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে যাবে। এই ভয় কি তাড়া করছে দলের অন্য নেতাদের ? আর এটাই কি ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে? তাই তারাও চাইছে আশীষ লালকে ব্যাক ফুটে ঠেলে দেওয়ার জন্য। না, হলে দলের প্রথম সারির একজন নেতা আক্রান্ত হয়েছেন,তারপরও কেন সুবল-সুস্মিতা সহ আই-প্যাক এই বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলছেন না? রাজ্যে এসে বঙ্গ নেতৃত্ব আক্রান্ত হলে বা সুস্মিতা দেব,আই-প্যাকের লোকজন আক্রান্ত হলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও টুইটারে প্রতিবাদ জানান।আর ত্রিপুরার ছেলে আশীষ লাল সিংহ আক্রান্ত হওয়ার পর সবাই নীরব।এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় দলের নিষ্ঠাবান কর্মী-সমর্থকরা।