ডেস্ক রিপোর্টার, ১৫সেপ্টেম্বর।।

নাম: সুব্রত মজুমদার।
বাড়ি:খোয়াই।
দল: ভারতীয় জনতা পার্টি।
পদ: মণ্ডল সভাপতি, খোয়াই।
সংসদীয় রাজনীতি: খোয়াই কেন্দ্রে বিজেপির বিজিত প্রার্থী।

২৩- র বিধানসভা নির্বাচনে দেশের নির্বাচন কমিশনে জমা করা হলফ নামায় সুব্রত মজুমদার দাবি করেছেন, তিনি একজন সমাজ সেবি। তিনি কোনও ব্যবসা বানিজ্য কিছুই করেন না। ব্যস, কমিশনে তথ্য অনুযায়ী, সুব্রত মজুমদারের কাছে রয়েছে নগদ ৫১লক্ষ টাকা। তার এই আমানত গচ্ছিত আছে বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টে।২৩- র নির্বাচনের পর নিশ্চিত ভাবে স্ফীত হয়েছে তার ব্যাংক একাউন্ট গুলি।কারণ ক্ষমতায় এসেছে দল। আর তিনিই যে খোয়াই কেন্দ্রের অঘোষিত বিধায়ক।
একবার ভাবুন তো, যিনি একজন সমাজ সেবি। ব্যবসা – বানিজ্য কিছুই করেন না। তার কাছে নগদ ৫১ লক্ষ টাকা আসবে কি করে? এতো টাকার উৎস কোথায়? সুব্রত মজুমদার ব্যবসা – বানিজ্য কিছুই করেন না।তা সত্ত্বেও তার ব্যাংকে আছে ৫১লক্ষ টাকা। এটা “হোয়াইট মানি”। তাহলে তার ব্ল্যাক মানির পরিমাণ কত? এটা খোয়াইয়ের মানুষ ভালো করেই আঁচ করতে পারছেন। হবেই বা না, কেন? তিনি যে এখন খোয়াই মণ্ডল সভাপতি।..

খোয়াই অঞ্চলে কান পাতলে শোনা যায়, পিতৃ বিয়োগ পর সুব্রতদের সংসার চলতো প্রয়াত বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কিন্তু এখন খোয়াইয়ের মণ্ডল সভাপতি সুব্রত অসাধারণ। বিভিন্ন টাকার উৎসে তার লম্বা হাত কালো হাত। তাই ফুলে ফেঁপে উঠেছে সুব্রতর ব্যাংক একাউন্ট। তাও আবার ২০১৮ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর। তার আগে তার ব্যাংক একাউন্ট ছিলো ফাঁকা।একাউন্টে লেগেই থাকতো খরা। আর এখন একাউন্ট থাকে টাকায় পরিপূর্ণ। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর নেতা সুব্রতর ঠাট – বাট সবই বেড়েছে।পাল্টে গিয়েছে মুখ মন্ডল।বেড়েছে গ্লো।কারণ কথা বলে টাকা।

খোয়াই মণ্ডল সভাপতি সুব্রত মজুমদারের টাকার উৎস কোথায়?গোটা খোয়াই অঞ্চলে তা ওপেন সিক্রেট। সুব্রত মজুমদারের টাকার মূল উৎস নিগোসিয়েশন বানিজ্য। তার সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চলছে তোলা বাণিজ্য। আর জমি কেনা – বেচা প্রনামী তো আছেই। নিগোসিয়েশন বাণিজ্য কেন্দ্র করে সম্প্রতি রাজধানীর উওর গেট থেকে এক ঠিকাদারকে অপহরন করেছিলো খোয়াইয়ের বিজেপির তোলাবাজ নেতারা।ঠিকাদার অপহরন কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ছিলো খোয়াই মণ্ডলের প্রাক্তন সম্পাদক পিন্টু রায়।

অপরাধ মূলক কার্য্য কলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিলো। চলতি সপ্তাহে বিজেপি পিন্টুকে ছয় বছরের জন্য বহিষ্কারও করেছে। এই পিন্টু রায় ও মন্ডল সভাপতি সুব্রত মজুমদার হরিহর আত্মা। মন্ডল সভাপতির নির্দেশেই পিন্টু খোয়াই অঞ্চলে শুরু করেছিল মাফিয়া রাজ। সুব্রত – পিন্টু মিলেমিশেই টাকার ভাগ বাটোয়ারা করতো। সুব্রত – পিন্টুর কালো টাকা উপার্জনের এই সমীকরণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল খোয়াইয়ের মানুষ। খোয়াইয়ের অপরাধ জগতের তথ্য বলেছে, মঙ্গলবার রাতে বিজেপির বহিষ্কৃত নেতা পিন্টু রায় মন্ডল সভাপতি সুব্রত মজুমদারের নাম করে তিন লক্ষ টাকা চেয়েছে খাদ্য দপ্তরের বিহারী শ্রমিকদের ঠিকাদারের কাছে। তাও ফোন করে।আসলে কুকুরের লেজ চুংঙ্গায় ঢুকিয়ে রাখলেও সোজা হয় না। এটাই প্রমাণ করলো পিন্টু – সুব্রত।

খোয়াই মণ্ডলের অন্দর মহলের খবর, ঠিকাদার অপহরন কাণ্ডের পর নিগোসিয়েশন কিছু দিন বন্ধ ছিলো। এখন সুব্রত ফের খোয়াইয়ে শুরু করেছে নিগোসিয়েশন। কিন্তু তাকে নাকি, বারবার বারণ করেছেন বিজেপির খোয়াই জেলার সভাপতি তথা কল্যাণপুর কেন্দ্রের বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী। সুব্রত জেলা সভাপতি পিনাকির কোনও কথা কর্নপাতই করেন নি। এখন পুরো দমে খোয়াইয়ে চলছে নিগো কারবার। সুব্রত – পিন্টুর দৌরাত্ম্যে দিশে হারা ঠিকাদাররাও।

আগেই আমরা বলেছি, মন্ডল সভাপতি সুব্রত মজুমদারের এখন ঠাট বাট বেড়েছে।পরিবর্তন হয়েছে তার জীবন শৈলী। খোয়াইয়ের আকাশে বাতাসে শোনা যায়, সুব্রত একটি বোলেরো গাড়ি ক্রয় করেছেন। তাও আবার ক্যাশ টাকায়। কিন্তু গাড়িটি নিজের নামে রাখেন। তার বিশ্বস্ত সৈনিক লিটন বণিক ওরফে লিটুর নামে গাড়ীটি ক্রয় করেছে। খোয়াই বিজেপির কর্মীদের বক্তব্য, সুব্রত এখন জড়িয়ে দিচ্ছেন প্রদেশ বিজেপির সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যকে। সুব্রত গোটা খোয়াইয়ে প্রচার করছেন, তিনি রাজীব ভট্টাচার্যকে পঞ্চাশলক্ষ টাকা দিয়ে আগের ঘটনাগুলি ড্যামেজ কন্ট্রোল করেছেন। তাই তিনি এখন বুক ফুলিয়ে পুনরায় শুরু করেছেন নিগোসিয়েশন বাণিজ্য। হয় তো বা, এই জন্যই তিনি জেলা সভাপতি পিনাকী দাস চৌধুরীর কথা কানেই তুলেন নি।

খোয়াই লোকজনের বক্তব্য, আগামী দিন গুলি সুব্রত মজুমদারের জন্য ভালো আসছে না।কারণ পিন্টুকে ছেটে দিয়েছে দল।এখন তার পালা। প্রদেশ বিজেপির কাছে সুব্রতর সমস্ত দুর্নীতির ফাইল রয়েছে। যে কোনো সময়ে বিজেপি সুব্রত মজুমদারের গলায় ঘণ্টা বেধে দিতে পারে। খোয়াই মণ্ডলের বিজেপির নেতা কর্মীরা এটা বিলক্ষণ বুঝে গিয়েছেন। তাই কিছু কিছু নেতা কর্মী বিপদের আঁচ বুঝে সুব্রত মজুমদারের সঙ্গ ত্যাগ করতে শুরু করেছে।তারা বুঝতে পেরেছেন, সুব্রত মজুমদারের সঙ্গে থাকলে তাদের রাজনীতির ভাগ্য আকাশেও নেমে আসতে পারে দুর্গতি। তাই আগে থেকেই এরা সুব্রতকে আলবিদা জানিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন নিরাপদ জায়গায়।