
ডেস্ক রিপোর্টার,৯ফেব্রুয়ারি।।
ঊনকোটি জেলার হেভিওয়েট কেন্দ্র কৈলাসহর। ২৩- র বিধানসভা নির্বাচনে কৈলাসহর কেন্দ্রের দিকে নজর রাজ্যের মানুষের। এই কেন্দ্রে মূলত লড়াই হবে বাম – কংগ্রেস জোটের প্রার্থী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিত সিনহা ও বিজেপির প্রার্থী মবস্বর আলীর মধ্যে।
কৈলাসহর বিধানসভা আসনটি বরাবর কংগ্রেসের দূর্গ। এই কেন্দ্র থেকে টানা পাচবার জয়ী হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিত সিনহা। কৈলাসহর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে তিনি হয়েছিলেন মন্ত্রীও। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ছন্দ পতন ঘটেছিলো বীরজিতের। হয়েছিলেন পরাজিত।শুধু তাই নয়,রাজ্য রাজনীতির হেভিওয়েট ব্যক্তিত্ব বীরজিত সিনহা ভোটের নিরিখে তিন নম্বরে চলে এসেছিলেন। এবং কংগ্রেস ও বিজেপির ভোট কাটাকাটিতে আসনটি দখল করেছিলো সিপিআইএম।তখন সিপিআইএম প্রার্থী ছিলেন মবস্বর আলী।কিন্তু তিনি এখন কৈলাসহর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী।

২৩- র মহারণে কৈলাসহর বিধানসভা কেন্দ্রে কে জয়ী হতে পারেন? বীরজিত কি ফের পারবেন নিজ দূর্গ দখল নিতে? নাকি শিবির পরিবর্তনকারী মবস্বর নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন? এই কোটি টাকার প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে।এই প্রতিবেদনে আমরা তুলে ধরবো কৈলাসহর বিধানসভা কেন্দ্রের রাজনীতির অন্তর কথা।
রাজনীতিকরা বলছেন, ২৩ র নির্বাচনে তুলনামূলক ভাবে বাম কংগ্রেস জোটের প্রার্থী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিত সিনহার পাল্লা ভারী।তার পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ।

* এলাকায় জনপ্রিয়তার নিরিখে এগিয়ে বীরজিত।
* বামেদের টোটাল ভোট ব্যাংক বীরজিতের পাশে।
* সঙ্গে কংগ্রেসের ভোট ব্যাংক।
* তিনি কৈলাসহর কেন্দ্রের পাঁচবারের বিধায়ক।
*দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত কংগ্রেসের দখলে।
* সংখ্যালঘু ভোটারদের সিংহ ভাগ বীরজিত শক্তি।
*কৈলাসহরে কংগ্রেসের বিভিন্ন শাখা সংগঠনও শক্তিশালী।
• বামেদের ভর যৌবনেও কৈলাসহর দূর্গ ছিলো অটুট।
* বিজেপির বিক্ষুব্ধ অংশ ঝুঁকছে কংগ্রেসের দিকে।
* প্রচারেও এগিয়ে বীরজিত।
বাম কংগ্রেস প্রার্থী বীরজিত সিনহাকে এই ভাবেই দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

কৈলাসহরে বিজেপির প্রার্থী মবস্বর আলী।তিনি ছিলেন এই কেন্দ্রের সিপিআইএমের বিধায়ক।কিন্তু ২৩- র মহারণে বাম – কংগ্রেস জোট হওয়াতে মবস্বর আলীর ভাগ্য আকাশে নেমে এসেছিল দুর্যোগ। সিপিআইএম জোট ধর্ম রক্ষার তাগিদে আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছে। আর তাতেই চটে যান মবস্বর।রাতারাতি তিনি দল ত্যাগ করেন। মওকা বুঝে বিজেপি তুলে নেয় মবস্বরকে। এবং করে প্রার্থী। শিবির পাল্টানো মবস্বর কি কৈলাসহরের রাজনীতির মানদণ্ডে গেরুয়া পতাকা তুলে ধরতে পারবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে রাজনীতিকরা কিন্তু মবস্বরকে খুব বেশি পয়েন্ট দিতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তার পেছনে যুক্তি সম্মত কারণ প্রকাশ্যে আনছেন রাজনীতিকরা।
* মবশ্বর বিজেপিতে যোগ দেওয়াতে
তার পাশে নেই সংখ্যালঘু ভোট।
* গেরুয়া আগুনের ক্ষোভের
* ছ্যাঁকা মবস্বরের শিবিরে।
* ২০১৩ সালেও সিপিআইএমের
টিকিটে লড়াই করেছিলেন মবস্বর।
* পরাজয়ের পর তার অনুগামীরা
আক্রমণ করেছিল হিন্দু বাড়ি ঘরে ।
* অভিযোগ কৈলাসহরের প্রাণ কেন্দ্রের
বামপন্থী হিন্দুরা তাকে ভোট দেয় নি।
* মানুষ মবস্বরের এই সন্ত্রাসের কথা ভুলে নি।
কৈলাসহর রাজনীতির অন্দর মহলের খবর, তৎকালীন সময়ে বর্তমান বিজেপি নেতা নিতীশ দে- ও ছিলেন সিপিআইএমে। মবস্বরের পরাজয়ের জন্য দায়ী করা হয়েছিল নিতীশকে।এই অভিযোগের কারণে নিতীশ দেকে সিপিআইএম বহিষ্কার করেছিলো। ১৮- র ভোটের আগে নিতীশ যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। এবং তিনি শেষ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন ।অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন তৎকালীন সিপিআইএম প্রার্থী মবস্বর আলীর কাছে। আর এখন মবস্বর বিজেপির প্রার্থী। এক্ষেত্রে ফের কপাল পুড়ল নীতিশ দে ‘ র। যদিও তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।
কৈলাসহরের মানুষ বলছেন, ২০১৩ সালে রাজনীতির রং লাগিয়ে শহরের হিন্দুদের উপর মবস্বর আলীর আপ্ত সহায়ক আব্দুল মান্নান ও তার অনুগামীদের সন্ত্রাস আজও কেউ মেনে নিতে পারেনি। এখন সেই মবস্বরকেই ফের হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি নিজেদের কাছে টেনে এনে প্রার্থী করেছে। শাসক দল বিজেপির এই রাজনীতির খেলায় সন্তুষ্ট নয় কৈলাসহরের মানুষ। কৈলাসহরে বিজেপির মূল ভোট ব্যাংক ছিলো হিন্দুদের মধ্যে। সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিজেপির বিশেষ কোনো ভোট ব্যাংক নেই।এখন মবস্বর বিজেপিতে যোগ দেওয়াতে তার ঝুলিতে থাকা সংখ্যালঘু ভোটও বাঁক নিয়েছে বিপরীত দিকে।
কৈলাসহরের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে রাজনীতিকরা বলছেন, তুল্যমূল্য বিচারের এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন বাম কংগ্রেস প্রার্থী বীরজিত সিনহা। তবে শেষ মুহূর্তেই ভোটাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যার দিকে যাবে তিনিই কৈলাসহরের রাজনীতির বাইশ গজ থেকে জয়ী হবেন। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২রা মার্চ পর্যন্ত। এখন দেখার বিষয় বীরজিত না মবস্বর , কার ললাটে লাগে রাজনীতির রাজ টিকা?