ডেস্ক রিপোর্টার,৪ সেপ্টেম্বর।।
২৩-র বিধানসভা নির্বাচন আরো ১৮ মাস বাকি। তার আগেই রাজ্য জুড়ে বেজে উঠেছে বিধানসভা ভোটের রণ দুন্দুভি।
বিধানসভার ভোটকে সামনে রেখে ঘর সাজাচ্ছে শাসক দল বিজেপি। রাজ্য রাজনীতিতে আচমকা মাথা চাড়া দিয়ে উঠা তৃণমূল কংগ্রেস ব্যাস্ত সংগঠন বিস্তারে। বঙ্গ নেতৃত্ব প্রায় প্রতিদিন আসা-যাওয়া করছে রাজ্যে।সব মিলিয়ে এখন পার্বত্য ত্রিপুরায় ভোটের প্রবল আবহ।
শাসক দল বিজেপি’র সংসারে জাকিয়ে বসেছিলো অশান্তির বাতাবরণ।কিন্তু সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের মাধ্যমে মাস্টার স্ট্রোক দিয়েছেন।
বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
বিজেপি’র সংস্কারপন্থী বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন ও মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের ঠান্ডা যুদ্ধ রাজ্য রাজনীতিতে ওপেন সিক্রেট। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণে সুদীপ রায় বর্মনকে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদ থেকে সরে আসতে হয়েছিলো। এরপর মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের মধ্যে চলতে থাকা “কোল্ড ওয়ার” পেয়েছিলো এক অন্য মাত্রা। সুদীপ রায় বর্মন বেশ কয়েকজন বিধায়ককে নিজের গ্রিপে রেখে বিপ্লব দেবের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন বিভিন্ন সময়।এই বিধায়করাও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নানান কথা বলেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশারদরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব নজর রেখছিলেন গোটা ঘটনার উপর।শেষ মুহূর্তে তাঁর রাজনৈতিক কূট চালে ভেঙে গিয়েছে সংস্কারপন্থী বিধায়ক গোষ্ঠি।
সংস্কারপন্থীদের মধ্যে দুই বিধায়ককে কাছে টেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। সংস্কারপন্থীদের অন্যতম দুই সদস্য রাম প্রসাদ পাল ও সুশান্ত চৌধুরীকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় জায়গা করে দেন তিনি। বিপ্লব কুমার দেবের এই মাস্টার স্ট্রোকে অনেকটা শক্তি খর্ব হয় বিজেপি’র সংস্কারপন্থীদের।
রাজনীতিকরা বলছেন, বিধায়ক রাম প্রসাদ পাল ও বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরীকে মন্ত্রী করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন স্ব-দলীয় বিদ্রোহী বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনকে। রাজনীতিকদের ব্যাখ্যা, ২৩-র রণভূমিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবে’র তুরুপের তাস হবেন তাঁর মন্ত্রিসভার দুই সদস্য রাম প্রসাদ পাল ও সুশান্ত চৌধুরী।
শাসক দল বিজেপি’র সংসারের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে হলফ করে বলা যায়, মুখ্যমন্ত্রী ও সুদীপ রায় বর্মনের মধ্যে এখন দূরত্ব আরো কয়েক যোজন বেড়ে গেছে। সুদীপ রায় বর্মন বিজেপিতে থাকলে তিনি একেবারেই কোণঠাসা হয়ে যাবেন। তবে সুদীপও দমবার পাত্র নন। ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস ঘোষণা দিয়েছে, বিজেপি’র বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের জন্য ঘাসফুল শিবিরের দরজা খোলা। সুদীপ রায় বর্মন ভালো করেই জানেন, বিজেপিতে তাঁর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে।তাই প্রয়োজন বিকল্প দলের।
রাজনৈতিকদের ধারণা, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।উপযুক্ত সময়ে সুদীপ রায় বর্মন আরো কয়েকজন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে তিনি যোগ দেবেন তৃণমূল কংগ্রেসে। যদি এই সমীকরণ সত্যি হয়,তাহলে ২৩-র মহারণে বিজেপিকে বড় আঘাত হানতে চাইবেন সুদীপ।এই ক্ষেত্রে সুদীপ রায় বর্মনকে আটকানোর জন্য ভোটের ফুটবল ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর উপযুক্ত দুই “স্ট্রাইকার” হতে পারেন বিধায়ক রাম প্রসাদ পাল ও বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী।আর মাঠে “মিডফিল্ড” ও “ডিফেন্সিভ স্ক্রিনে”র ভূমিকায় থাকবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী শিবির স্পস্ট হয়ে গেছে, আগামী নির্বাচনে আগেই সুদীপ রায় বর্মন তৃণমূল কংগ্রেসে নাম লিখাবেন।সুদীপ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েই বিজেপিকে যে পাল্টা কাউন্টার অ্যাটাক
করবেন,এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।রাজনীতিকরা বলছেন, সুদীপ রায় বর্মনের রাজনৈতিক আক্রমণ প্রতিহত করতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব যে দুই মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল ও সুশান্ত চৌধুরীকেই ট্রাম কার্ড হিসাবে ব্যবহার করবেন তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
এটাও বাস্তব ২০২৩-র বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই গুটি সাজিয়ে নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।তিনি চষে বেড়াছেন গোটা রাজ্য।কথা বলছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে।একই সঙ্গে আরও দৃঢ় করছেন জন সম্পর্ককে।অর্থাৎ ২৩-র ভোট ময়দানে রাজনৈতিক ভাবে বিরোধীদের কচু কাটা করতে আগাম স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব তথা প্রদেশ বিজেপি।
