* অভিজিৎ ঘোষ*
…………………………

“খেলা হবে”/ “জিতবে ত্রিপুরা”—-রাজ্যে এসে তৃণমূলের বঙ্গ নেতৃত্ব কণ্ঠে ধরছেন এই স্লোগান।
ব্যাস, রাজনীতির ময়দান গরম করার জন্য অবশ্যই এই ধরণের স্লোগান আবশ্যক। তাতে দোষের কিছু নেই।তারা বিচরণ করবেন গোটা রাজ্যে।মজবুত করবেন সংগঠন।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কর্মীদের ছাড়িয়ে আনতে ছুটে গিয়েছিলেন খোয়াইয়ে। কর্মীদের আদালত থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার পর তিনি খোয়াই ত্যাগ করেছিলেন।দলের একজন প্রথম সারির নেতা থেকে এটাই আশা করেন কর্মীরা।তার জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশংসা কুড়িয়েছেন কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা লড়াইয়ের জন্য বুকে “বল” পেয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা কি? এখন পর্যন্ত স্থানীয়দের মধ্যে সেই অর্থে কোনো মুখ নেই।তবে স্ব-ঘোষিত ডাকসাইটের নেতারা কোথায়? অবশ্যই তারা বলবেন,”আমরাও তো আক্রান্ত হয়েছি”। তাও অস্বীকার করার জায়গা নেই।তারপরও তারাই নেতা। কর্মীদের ঝাড়ানো ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে দল ক্ষমতায় এলে সংশ্লিষ্ট নেতারাই “ক্রিম”খাবেন চেটে-পুটে। তাহলে নিশ্চয় কর্মীদের প্রতি তাদের দায়িত্ব থাকবে।কিন্তু কোথায়,সেই দায়িত্ব দেখাতে পারলেন স্থানীয় নেতৃত্ব? তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত সাব্রুমের নন্দীগ্রামের বাসিন্দা আহত বেচারাম দাস।
গত ১৫আগস্ট নন্দীগ্রামের তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী বেচারাম দাস আক্রান্ত হয়েছিলেন।বেচারামের অভিযোগ,বিজেপি’র দুষ্কৃতীরা তাকে রক্তাক্ত করেছিলো। আহত অবস্থায় বেচারামকে আনা হয়েছিলো আগরতলার জিবি হাসপাতালে।সেখানে চিকিৎসাকরা তার মাথার সিটি স্ক্যান করে ব্যবস্থা পত্রে কিছু ওষুধ লিখে পত্রপাঠ বিদায় করে দেন। মাথায় সেলাই লাগা সত্ত্বেও তাকে জিবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি রাখে নি।জানিয়েছেন বেচারাম।
এরপর দলের হাতে গুনা জনা তিনেক কর্মী বেচারামকে আগরতলায় তারই এক সহযোদ্ধার বাড়িতে নিয়ে যায়।তারপর দুইদিন এই বাড়িতেই ঠাঁই হয়েছিল বেচারামের।অবাক করার মত ঘটনা দলের কোনো নেতা বেচারামকে দেখতে যায়নি।খোঁজ নেন নি তার শারীরিক অবস্থার। অথচ ধাপে ধাপে আক্রান্ত হওয়া দলের বঙ্গ নেতাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো কলকাতায়। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্ধ ভক্ত বেচারাম দাসের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়ায় ফুসরুত পাননি টিএমসি’র স্থানীয় নেতৃত্ব ও রাজ্যে অবস্থানরত বঙ্গ নেতৃত্ব। প্রশ্ন তুলেছেন দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা।
শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সকালে নিরাশায় বুক বাঁধা মমতা ভক্ত বেচারাম দাস নীরবেই আগরতলা ত্যাগ করেন।চলে যান সাব্রুমস্থিত তার নন্দীগ্রাম বাড়িতে।বেচারাম দাসই হলেন এই রাজ্যের প্রকৃত তৃণমূল কর্মী। ২০১৬ সালে বামেদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে বেচারামের স্ত্রী চিনু দাস তৃণমূলের হয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন।ছিনিয়ে এনে ছিলেন নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতের একটি ওয়ার্ড। সঙ্গে আরও দুইটি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছিলো ঘাসফুল।সব কিছুর পেছনেই মূল কারিগর ছিলেন বেচারাম দাস। রাজ্যের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্থাৎ রাম জামানাতেও অবিচল বেচারাম। আজও তার নন্দীগ্রামের বাড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সাটানো তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়।তিনি নিরন্তর ধরে রেখেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের ঝান্ডা।
আজ আক্রান্ত হয়েও দলের প্রথম সারির নেতাদের কাছে “অনাদরই” প্রাপ্য হলো বেচারামের। পরিতাপের বিষয় হাফ ডজন বঙ্গ নেতৃত্ব রাজ্যে অবস্থান করলেও বেচারাম তাদের কাছেও ব্রাত্য। রাজ্য রাজনীতির “পরিযায়ী নেতারা” এখন ভিড়ছেন তৃণমূল শিবিরে। নিজেদের রাজনীতির ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি করতে তারা আজ এদলে, আবার স্বার্থ ফুরিয়ে গেলেই কাল ওদলে নাম লিখছেন। সুযোগ পেলেই শুভ্র বস্ত্র পরিধান করে গায়ে সুগন্ধি ছিটিয়ে চলে আসেন ফটো সেশনে। বঙ্গ নেতৃত্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে গাল ভরা হাসি দিয়ে ছবি তোলেন। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট রাজনীতির কারবারীরা তাদের অনুগামীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন “কত না খাতির” বঙ্গের দাদা-দিদিদের সঙ্গে।
ঘাসফুলের একাংশ কর্মীর অভিযোগ, বিজেপির সন্ত্রাসের কারণে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে তৃনমূল কর্মী-সমর্থকরা বাড়ি ছাড়া।দিন-রাত কাটাতে হচ্ছে জঙ্গলে।কিন্তু তাদের খোঁজ রাখার কেউ নেই। কর্মীদের বিপদের দিনেও বঙ্গ নেতৃত্ব হয়তো তাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি খেলা দিবস পালন করতে ব্যস্ত ছিলেন সোমবার।কিন্তু রাজ্য নেতৃত্ব কোথায় ছিলেন? তারা কি একবারের জন্যও বেচারামের খোঁজ পারলেন না? আর যারা রাত কাটাচ্ছেন জঙ্গলের তাদের জন্য কি চিন্তা হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের স্ব-ঘোষিত ডাক-সাইটের নেতাদের? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, ঘাসফুলের নেতাদের দেওলিয়াপনার শিকড় যদি আরো গভীরে প্রোথিত হয় তাহলে আগামী দিনে মমতার স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়িত হবে তা বলা কঠিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *