# অভিজিৎ ঘোষ #
                      __________________

      বিপ্লব কুমার দেব। রাজ্যের লোকসভার পশ্চিম আসনের প্রার্থী। তিনি ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ।
               শুক্রবার বিপ্লব কুমার দেব অবতীর্ণ হয়েছেন তাঁর সংসদীয় রাজনৈতিক জীবনের তৃতীয় যুদ্ধে। এর আগে বিপ্লব জয়ী হয়েছিলেন দুইটি বড় যুদ্ধে। প্রথম যুদ্ধে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন গোটা দেশকে। জয়ের রেকর্ড গড়ার জন্য মুখিয়ে থাকা বামেদের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় যুদ্ধে অবশ্যই তিনি হাসতে হাসতে জয়ী হয়েছিলেন।এখন তৃতীয় যুদ্ধের মুখোমুখি।


এই রাজ্যে বামেরা নিশ্চিত ভাবে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলো। রাজ্যের মানুষ ভেবে ছিলো গোটা দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেও, ত্রিপুরাতে সম্ভব নয়।কালের পর কাল ত্রিপুরার শহর থেকে সমতল, গ্রাম থেকে পাহাড় পত পত করতো লাল পতাকা। রাজ্যের মানুষের শয়নে – স্বপ্নে যখন লাল পতাকা দেখতে শুরু করেছিলো, ঠিক তখনই বামেদের উর্বর ভূমিতে পা রেখেছিলেন রাজ্য রাজনীতির “বিস্ময় যুবক” বিপ্লব কুমার দেব। অন্তত


তিনি বাম মুক্ত ত্রিপুরা গড়ার ডাক দিয়েছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ বিপ্লব কুমার দেবের বিক্রমে বামেরা বসে গিয়েছিল হাঁটু গেঁড়ে। তখনই সংসদীয় রাজনীতিতে বিপ্লব কুমার দেবের ঝুলি ছিলো শূন্য। এর আগে এই স্তরে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা  ছিলো না। কিন্তু বিপ্লব যে আক্ষরিক অর্থে রাজ্যের মাটিতে এসেছিলেন “বিপ্লব” করার জন্যই। গোটা বিশ্ব ব্যাপী বিপ্লব ও সংগ্রামের জন্য মাহির কমিউনিস্টরাও বিপ্লব কুমার দেবের কাছে গো – হারা হেরে যায়।


গোটা রাজ্যে বামেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের রাজনৈতিক বিষ বাষ্প তিনি ছড়িয়ে দিয়ে সক্ষম হয়েছিলেন। মানুষও তাঁর উপর ভরসা রাখতে শুরু করে। বাম দূর্গ যে  টুকরো টুকরো করে দেওয়া সম্ভব, এই চিরন্তর সত্য বিপ্লব মানুষকে বুঝাতে পেরেছিলেন। রাজ্যের পরিবর্তনকামী মানুষ বিশ্বাস রেখেছিল বিপ্লব কুমার দেবের ” বিপ্লবের” উপর। ২০১৮- ৩রা মার্চ বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে এই রাজ্য আনুষ্ঠানিক ভাবে বাম মুক্ত হয়। জীবনের প্রথম সংসদীয় রাজনীতির মঞ্চে বড় জয়ের স্বাদ পান বিপ্লব।তিনি হয়েছিলেন রাজ্যের প্রথম বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী।


টানা চার বছর রাজ্য শাসনের পর বিপ্লবকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার থেকে অবহ্যাতি দিতে হয়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে। তারপর সবাই ভেবে ছিলো ফুরিয়ে গিয়েছেন বিপ্লব কুমার দেব। শেষ হয়ে গিয়েছে তাঁর রাজনৈতিক বিপ্লব। কিন্তু, না। বিজেপির সর্ব ভারতীয় নেতৃত্ব বিপ্লব কুমার দেবকে রাজ্য সভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।শুরু হয় বিপ্লব কুমার দেবের দ্বিতীয় রাজনৈতিক যুদ্ধ। তাতে অবশ্যই বিপ্লবকে বেশি কাঠ – খড় পোড়াতে হয় নি। রাজ্য সভায় নির্বাচনে দলের বিধায়কদের ভোটে নিশ্চিত ভাবেই তিনি জয়ী হন। বিপ্লব কুমার দেবকে কেন্দ্রীয় বিজেপি সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে দেয়। তাঁকে দায়িত্ত্ব দেওয়া হয় হরিয়ানা বিজেপির প্রভারী হিসাবে।সেখানেও তিনি সফল।


সর্বশেষে বিপ্লব কুমার দেবের উপর ফের আস্থা রাখেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।২৪- র লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরার পশ্চিম আসনে তাঁকে প্রার্থী করে বিজেপি। এটা বিপ্লব কুমার দেবের তৃতীয় সংসদীয় রাজনীতির লড়াই। ১৯- এপ্রিলের এই লড়াইয়েও বিপ্লব নিশ্চিত ভাবে টপকে যাবেন বলেই দৃঢ় বিশ্বাস তাঁর অনুগামীদের।
               


এর আগে ত্রিপুরার কোনো মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যসভা ও লোকসভার সাংসদ হতে পারেন নি। বিপ্লবের সামনে এই নজির গড়ার সুযোগ। বিপ্লব কুমার দেব রাজনীতির এই নতুন কৃতি স্থাপন করতে পারবেন কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরোও কিছুটা দিন। তবে জলের স্রোত কোন দিকে গড়াবে তাও কিন্তু পরিষ্কার।
               

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *