ডেস্ক রিপোর্টার,২রা এপ্রিল।।
আগামী সপ্তাহে ঘোষণা হবে রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ। উপনির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে সবকয়টি রাজনৈতিক দল।ব্যতিক্রম নয় তৃণমূল কংগ্রেস। সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাবে ঘাসফুল শিবির। চারটি কেন্দ্রেই প্রার্থী দেবে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
উপ নির্বাচনে কারা হচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী? এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করেছে “জনতার মশাল”। এই মুহূর্তে উপনির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস আড়াআড়ি ভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে বলে খবর। এক ভাগে দলের পুরানো নেতা-কর্মী সহ প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ দাস। অন্য লবিতে আছেন প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক। দুই শিবিরই দলের হাইকমান্ডের কাছে দাবি জানাবে নিজ নিজ প্রার্থীদের জন্য।শেষ পর্যন্ত দলের হাইকমান্ড কি সিদ্ধান্ত নেয় এটাই এখন দেখার বিষয়।
প্রদেশ তৃণমূলের অন্দর মহলের বক্তব্য, দলের পুরানো কর্মীদের তালিকা অনুযায়ী, উপ নির্বাচনে টাউন বড়দোয়ালী এলাকায় প্রার্থী হচ্ছেন স্বপ্নদ্বীপ চক্রবর্তী, আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী নীলকান্ত সিনহা, সুরমা কেন্দ্রে আশীষ দাস এবং যুবরাজনগরে রত্নেশ্বর দেবনাথ।
তৃণমূল কংগ্রেসের এই লবির দাবি, যুব তৃণমূল নেতা স্বপ্নদ্বীপ চক্রবর্তী একজন উচ্চ শিক্ষিত।পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। টাউন বড়দোয়ালী অঞ্চলে দলের সংগঠন বৃদ্ধি করতে তাঁর বড় ভূমিকা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্নদ্বীপ কাজ করছে তৃণমূলের সঙ্গে। তাঁর অনুগামীর সংখ্যাও রয়েছে বেশ ভালো। স্বাভাবিক ভাবেই পুরানো তৃণমূলীরা বড়দোয়ালী কেন্দ্র থেকে স্বপ্নদ্বীপকে প্রার্থী করতে চাইছেন। এই কেন্দ্রে সুবল ভৌমিকের লবির সঙ্গীতা ব্যানার্জি চেষ্টা করছেন প্রার্থী হতে।তিনি আগরতলা পুর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন।কিন্তু হয়েছিলেন পরাজিত।তবে সুবল ভৌমিকও নাকি সঙ্গীতা ব্যানার্জিকে প্রার্থী করতে চাইছেন না।তিনিও বিকল্প প্রার্থীর খুঁজে রয়েছেন।তবে এখনো কাউকে পাননি।
আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রেও তৃণমূল কংগ্রেসের দুই লবি সক্রিয় হয়েছে প্রার্থী দিতে। পুরানোর প্রার্থী করতে চাইছে নীলকান্ত সিনহাকে। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করছেন।দলের সঙ্কট সময়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শকে পুঁজি করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। দলের কাছে একজন লড়াকু নেতা হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে সুবল ভৌমিকের লবি চাইছে পান্না দেবকে প্রার্থী করতে। পান্না দেব এবার পুর নিগম নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন।কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। পান্না দেব ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনেও এই কেন্দ্র থেকে লড়াই করেছিলেন। বিজেপি’র গেরুয়া ঝড়ে তিনি উড়ে গিয়েছিলেন খড়-কুটুর মতো।পরে তিনি যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসে। এবার হঠাৎ করে প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের মরা গাঙে জল আসতেই জোয়ারে ভেসে যান পান্না দেব। তিনি ফের কংগ্রেস ত্যাগ করে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছেন। শহরের রাজনীতিতে পান্না দেব একটি পরিচিত মুখ বটে তবে এখন সেই অর্থে তাঁর নেই জনভিত্তি। পান্না দেব সম্পর্কে এমনটাই ধারণা রাজনীতিকদের।
উপনির্বাচনে সুরমা বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হচ্ছেন আশীষ দাস। তিনিই আগেই এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। আশীষ দাস বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন।এরপর তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ করে দিয়েছিলো রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ। স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রটি বিধায়ক শূন্য হয়ে পড়ে। এই কেন্দ্রে অবশ্যই সুবল ভৌমিক লবি বিকল্প কাউকে দেবে না। সর্ব সম্মতি ক্রমে আশীষ দাসই হবেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী।তবে আশীষ দাসের জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জের বিষয়।
উত্তর জেলার যুবরাজ নগর বিধানসভা কেন্দ্রেও অনুষ্ঠিত হবে উপভোট। এই কেন্দ্রে পুরানো তৃণমূলীরা রত্নেশ্বর দেবনাথকে প্রার্থী করতে চাইছে। তাদের যুক্তি রত্নেশ্বর দীর্ঘদিনের পুরানো কর্মী। সুখ দুঃখেও তিনি ছিলেন দলের পাশে।২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে রত্নেশ্বর দেবনাথ যুবরাজ নগরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই পুরানোরা রত্নেশ্বরকে এগিয়ে রাখছে।তবে এই কেন্দ্রে সুবল ভৌমিকের লোক রয়েছে প্রার্থীর দৌঁড়ে। তিনি স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য মৃণাল দেবনাথ। মৃণাল উচ্চ শিক্ষিত। বাম ঘরানার থেকে সে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসে। যুবরাজ নগর কেন্দ্রের প্রয়াত বিধায়ক রামেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথের ভাইপো মৃনাল। বয়সে যুবক মৃণালকে সামনে রেখে বামেদের ভোট টানার পরিকল্পনা নিয়েছে সুবল এন্ড কোং। সুবল লবির যুক্তি, রত্নেশ্বর পরীক্ষিত। গত বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করেছে।মৃণাল নতুন।এলাকা জুড়ে তাঁর একটা পরিচিতি রয়েছে। সব মিলিয়ে যুবরাজ নগর কেন্দ্রে উপ ভোটে প্রার্থী ইস্যুতে জোর লড়াই হবে রত্নেশ্বর ও মৃণালের মধ্যে।অন্তত এমনটাই আচ করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের পুরানো লবি ও নতুন লবি’র লড়াইয়ের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কারা জয়ী হবে? তা দেখার জন্য অবশ্যই কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। রাজনীতির শতরঞ্জে নতুন না পুরানো কোন গোষ্ঠির উপর আস্থা রাখেন মমতা-অভিষেক? তা বলবে সময়েই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *