ডেস্ক রিপোর্টার,২১ জুন।।
  পাঠক বর্গ আপনারা এই সুদৃশ্য বিল্ডিংটি চিনতে পেরেছেন? অনেকেই হয়তো বা দেখেছেন। এই বিল্ডিংটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজ্যের মানুষের অনেক স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন কবে সাকার হবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া দুস্কর। কারণ রাজ্যের মানুষের স্বপ্ন এখন খান খান হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আমরা “জনতার মশাল” এক্সক্লুসিভ রিপোর্টে খোলসা করছি এই সুদৃশ্য বিল্ডিংয়ের আদি – অন্ত।

*নিশ্চিন্তপুর আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনের ৯০ কোটির টার্মিনাল ভবন।

*মরণ ফাঁদে পরিণত স্টেশনের টার্মিনাল ভবন।

*ভেঙ্গে গিয়েছে টার্মিনাল ভবনের ছাদ

* ভেঙ্গে চৌচির টার্মিনাল ভবনের ওয়াল।

* বড় বড় ফাটল ধরেছে টার্মিনাল ভবনের ফ্লোরে।

* রড,কাঠ ও বাঁশ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে  টার্মিনাল ভবনের ছাদ।

*যেকোনো সময় হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়তে পারে আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনের টার্মিনাল ভবন।


পাঠক আপনারা নিশ্চয় এখন বুঝতে পেরেছেন এই সুদৃশ্য বিল্ডিংয়ের পরিচয়। এটি আগরতলা – আখাউড়া রেল স্টেশনের টার্মিনাল ভবন। আগরতলার নিশিন্তপুরে গড়ে উঠেছে এই আন্তর্জাতিক রেল স্টেশন। ত্রিপুরা – বাংলাদেশের মধ্যে এই স্বপ্নের রেল লাইনের দৈর্ঘ্য ১৫কিলোমিটার।তারমধ্যে এপারে পড়েছে ৬কিলোমিটার রেল লাইন।বাদবাকি রেল লাইন ওপার সীমান্তে। ২০১৩ সালের ২১মে আগরতলা – আখাউড়া রেল লাইন নিয়ে ভারত – বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতার স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিলো।


২০১৮ সালে আগরতলা – আখাউড়া রেল লাইন আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু  নির্দিষ্ট সময়ে রেল লাইনের কাজ শেষ করা সম্ভব হয় নি।এর পর চলে আসে করোনার প্রভাব। বন্ধ থাকে কাজ। ভারত সরকার চাইছে ২০২৪- র আগেই আগরতলা – আখাউড়া রুটে রেল পরিষেবা চালু করতে। কিন্তু তা কি সম্ভব হবে?


আগরতলার নিশ্চিন্ত পুর আন্তর্জাতিক রেল স্টেশন তৈরির বরাত পেয়েছিল ইরকন নামক একটি নির্মাণ সংস্থা। এই নির্মাণ সংস্থা থেকে টার্মিনাল ভবন তৈরীর বরাত পেয়েছিলেন রাজ্যের এলিট ক্লাসের ঠিকাদার শিবু সাহা। স্টেশন চত্বরের রোড তৈরির বরাত পেয়েছিল ইপিআইএল। এবং স্টেশন চত্বরের জলের ট্যাঙ্ক, বিএসএফের টাওয়ার নির্মাণের দায়িত্ত্ব পেয়েছিলেন রাজ্যের ঠিকাদার দীপক পাল।

ঠিকাদার শিবু সাহা

এখন সবই চলছে ঠিকঠাক। রেল লাইনের কাজ চলছে জোর কদমে। আসছে স্বপ্ন পূরণের মাহেন্দ্রক্ষণ। আর তাতেই বিপত্তি। নিশ্চিন্ত পুর রেল স্টেশনের টার্মিনাল ভবন পরিণত হয়েছে মরণ ফাঁদে। টারমিনাল ভবনের এক দিকের ওয়ালে কিভাবে ধরেছে ফাটল।নির্মাণ সংস্থা বার বার করেও সমস্যার সমাধান করতে পারছে না।

টার্মিনাল ভবনের ওয়াল ফাটার ছবি।


আপনারা দেখেছেন টারমিনাল ভবনের ওয়াল ফাটার ছবি। এই প্রতিবেদনে দেখুন টার্মিনাল ভবনের ফ্লোরে কিভাবে ধরেছে ফাটল?ফ্লোর ভেদ করে মাটি উপরে ভেসে উঠেছে।

টার্মিনাল ভবনের ফ্লোর ফাটার ছবি

এখানেই শেষ নয়। টারমিনাল ভবনের ছাদও ভেঙ্গে গিয়েছে। ছুটে গিয়েছে ছাদের জয়েন্ট। গোটা ছাদ হেলে গিয়েছে নিচের দিকে।

ভেঙ্গে গিয়েছে টার্মিনাল ভবনের ছাদের জয়েন্ট।

তরিগড়ি ছাদ আটকানোর জন্য আলাদা ভাবে লোহার পিলার দিয়ে সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনের  স্বপ্নের টার্মিনালের ভাঙা ছাদের ছবিও তুলে ধরেছি এই প্রতিবেদনে।

লোহার পিলার দিয়ে সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে ছাদ।

রাজ্যের মানুষের স্বপ্নের আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনের টার্মিনাল ভবন মরণ ফাঁদে পরিণত হলো কেন? তার দায় ভার কে নেবে? বিশেষজ্ঞ  বাস্তুকাররা বলছেন, টার্মিনাল ভবনের গোড়াতেই গলত। টারমিনাল ভবনটি যে জায়গাতে হয়েছে, সেটি ছিল একটি খাল। এই খালের উপর মাটি ফেলে তৈরি করা হয় টারমিনাল ভবন। প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই টার্মিনাল ভবনটি নির্মাণের সময় অত্যন্ত নিম্ন মানের কাজ হয়েছে ।এই কারণেই আজ খেসারত দিতে হচ্ছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ।তার জন্য দায়ী রেলের ইঞ্জিনিয়াররাও।কেননা টারমিনাল ভবনটি তৈরির সময় নিম্ন মানের কাজ হলেও তাদের কোনো হেলদোল ছিলো না। অভিযোগ, নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে রেলের ইঞ্জিনিয়ারদেরও গোপন সমঝোতা হয়েছে। আর পাপের ফল ভোগ করতে হচ্ছে রাজ্যের মানুষকে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে টার্মিনাল ভবনটি জোড়া তালি দিয়ে মেরামত করলেও সর্বক্ষণ থাকবে বিপদের হাতছানি। ট্রেন চলাচল শুরু হলে ট্রেনের ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠবে স্বপ্নের টার্মিনাল ভবন।   ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে যে কোনো সময়। টারমিনাল ভবনের লড়ঝড় অবস্থার কারণে আগরতলা – আখাউড়া রুটে ট্রেন চলাচলও বিলম্ব হতে পারে। কারণ এই টার্মিনাল ভবনের বেশ কিছু পিলার ভাঙতে হবে। নিচের দিকে ঝুঁকে যাওয়া  ভবনের ছাদও মেরামত করাও সময় সাপেক্ষ। সব মিলিয়ে ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নিশ্চিন্ত পুর রেল স্টেশনের স্বপ্নের টার্মিনাল ভবন এখন বিশবাও জলে।


উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রের খবর, এই টার্মিনাল ভবন নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্যের এলিট ক্লাসের ঠিকাদার শিবু সাহা।এই রাজ্যে প্রচুর বড় বড় কনস্ট্রাকশন করেছেন। অভিযোগ,ঠিকাদার শিবু সাহার সুনামের পাশাপাশি প্রচুর দুর্নাম রয়েছে। বহু বছর আগে শিবু সাহা নির্মাণ করেছিলেন খয়েরপুর চতুর্দশ দেবতার বাড়ি সংলগ্ন পাকা ব্রিজ। কিন্তু ব্রিজ উদ্বোধনের আগেই ভেসে গিয়েছিল হাওড়ার জলে। অর্থাৎ পাকা ব্রীজ বোধনের আগেই হয়েছিলো বিসর্জন। ঠিকাদার শিবু সাহার তৈরি আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনের টার্মিনাল ভবনও কি একই ভাবে সদ গতি প্রাপ্ত হবে? আশঙ্কা করছে রাজ্যের মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *