ডেস্ক রিপোর্টার,১৬ আগস্ট:
” আমার গ্রাম-আপনার গ্রাম।
তার নাম নন্দীগ্রাম।”—- সদ্য সমাপ্ত বাংলার ভোটে এই মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।নন্দীগ্রাম থেকেই মোদী-শাহ বধের ডাক দিয়েছিলেন মমতা।যদিও নন্দীগ্রাম নিরাশ করেছে মমতাকে।বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।
পশ্চিম বাংলার সঙ্গে ত্রিপুরার ভাষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি নানান বিষয়ে মিল রয়েছে।কেউ কেউ ত্রিপুরাকে বাংলার অঘোষিত উপনিবেশও বলে থাকেন। তবে এত কিছুর মাঝে বাংলার সঙ্গে এমন একটা বিষয়ের মিল রয়েছে,যা অনেকের অজানা। এমন কি বিষয় যে অনেকেই জানেন না? সেটা হলো “নন্দীগ্রাম।” বাংলার নন্দীগ্রামের মত ত্রিপুরাতেও রয়েছে “নন্দীগ্রাম।” রাজ্যের দক্ষিণ জেলার সাব্রুমে সেই অখ্যাত নন্দীগ্রাম।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ত্রিপুরার অখ্যাত নন্দীগ্রামকেই লাইম লাইটে নিয়ে আসতে চাইছেন। সাব্রুমের নন্দীগ্রামকে ভিত্তি করেই ত্রিপুরাতে বিজেপি’র লড়াইয়ের ডাক দেবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।তৃণমূল সূত্রের দাবি, খুব শীঘ্রই রাজ্যে আসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সম্ভবত চলতি মাসের শেষের দিকে।নয়তো বা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে এসে টানা ১৫দিন অবস্থান করবেন।তিনি রাজ্যে এসেই ছুটে যাবেন সাব্রুমের নন্দীগ্রামে। এই নন্দীগ্রাম থেকেই “জিতবে ত্রিপুরা” স্লোগানকে ছড়িয়ে দেবেন গোটা রাজ্যে।
রাজনীতিকরা বলছেন, ত্রিপুরার সাব্রুমের নন্দীগ্রামও ত্রিপুরার জন্য উর্বর জমি।এই নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতে একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে তিনটি ওয়ার্ড ছিলো।অর্থাৎ ঘাসফুলের তিন জন নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। একারণেই বঙ্গ থেকে আসা তৃণমূল নেতারা বারবার ছুটে যান সাব্রুমের নন্দীগ্রামে।
প্রদেশ তৃণমূল সূত্রের খবর, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে এসে সাব্রুমের নন্দীগ্রামে গিয়ে বাংলার নন্দীগ্রামের আওয়াজ তুলবেন।অর্থাৎ ঘুরিয়ে বললে, ” আমার গ্রাম-আপনার গ্রাম।/তার নাম নন্দীগ্রাম।”–এই পংক্তি দিয়েই লড়াইয়ের ডাক দেবেন মমতা।তবে বাংলার নন্দীগ্রাম একটি বিধানসভা কেন্দ্র।আর ত্রিপুরার দক্ষিণ জেলার অজ গ্রাম “নন্দীগ্রাম” একটি পঞ্চায়েত।
বঙ্গের শীর্ষ স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন,” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরাতে এসে টানা এক পক্ষ কাল অবস্থান করবেন। এই সময়ের মধ্যে মমতা পরিদর্শন করবেন রাজ্যের প্রতিটি জেলা ও মহকুমা।সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তৈরি করবেন দলীয় কার্যালয়”।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে এই আগমন পর্ব নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক ভাবে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। নিন্দুকেরা বলছেন,”এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা কিভাবে টানা ১৫দিন ত্রিপুরায় বসে থাকবেন? তাহলে কিভাবে চলবে তাঁর রাজ্যে? অবশ্যই নিন্দুকদের এই সমস্ত কথা-বার্তা নিয়ে ভাবতে রাজি নয় তৃণমূল।তাদের বক্তব্য,”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা করেন ভেবে চিন্তেই করেন।এই মুহূর্তে মমতা ত্রিপুরায় এলে দলের সংগঠন দ্রুত মজবুত হবে।প্রচুর সংখ্যক মানুষ ভিড়বে তৃণমূলের দিকে।মমতার জন প্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে মূলত তৃণমূলকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলতেই ঘাসফুলের এই রণকৌশল।
প্রসঙ্গত, সাব্রুমের বাসিন্দা আবীর বিশ্বাস জানিয়েছেন, নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত ১৬ সালে তৃণমূলের তিনজন নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।
তৎকালীন সময়ে বাম বামপন্থীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নন্দীগ্রামের তিনটি ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের তিনজন জন প্রতিনিধি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মহিলা।তিনি চিনু দাস। নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যা। তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন পিঙ্কু দে । পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডেও ছিলেন তৃণমূলের নির্বাচিত জন প্রতিনিধি। ২০১৭ সালে পিঙ্কু দে বিজেপিতে চলে যান।কিন্তু তৃণমূলের পতাকা আগলে ধরে রাখেন মহিলা জন প্রতিনিধি চিনু দাস। এই মুহূর্তে পঞ্চায়েত
সদস্যার দায়িত্বে না থাকলেও আজও গ্রামে তৃণমূলের ব্যাটন তাঁর হাতেই।
আবীর বিশ্বাসের কথায়, “চিনু দাসের স্বামী বেচারাম দাসও একজন কট্টর তৃণমূল কর্মী। নিজ বাড়িতে খুলে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়। অর্থাৎ পঞ্চায়েত হলেও ঘাসফুলের শক্ত ঘাঁটি রাজ্যের দক্ষিণ জেলার অখ্যাত নন্দীগ্রাম। তাই রাজ্যের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের বধ্য ভূমি হয়ে উঠতে পারে রাজ্যের প্রান্তিক অঞ্চলের এই অজ গ্রাম।