ডেস্ক রিপোর্টার, ২৮সেপ্টেম্বর।।
        প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক দেশীয় রাজনীতিতে একটি পরিচিত নাম। পশ্চিম বাংলার শেষ বিধানসভা নির্বাচনে আইপ্যাক সর্বভারতীয় স্তরে অনেকটাই নাম কুড়িয়েছিলো।বাংলায় মমতার জয়ের পর তৃণমূলের ঘরের ভোট সমীক্ষক সংস্থা হয়ে উঠেছিল আইপ্যাক। তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থা কুড়িয়েছে প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক ভালো ব্যবসা বানিজ্য শুরু করে দিয়েছিলো।
       রাজনীতিকদের কথায়, এই আস্তা থেকেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আইপ্যাককে পাঠিয়েছিলেন ত্রিপুরায়। তার লক্ষ্য ছিলো “ত্রিপুরা জয়”। গতবছর আইপ্যাক টিম আগরতলায় এসে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের পুলিশ ভয়ে(!) রাজ্যে আসা আইপ্যাকের টিমকে করেছিল গৃহবন্দী। জল গড়ায় অনেকদূর পর্যন্ত। এই ঘটনা  নিয়ে আন্দোলিত হয় দেশের রাজধানী দিল্লিও। তখন এই রাজ্যের মানুষ মনে করেছিল বাংলার মতোই আইপ্যাক ত্রিপুরাতেও বিজেপি সরকারের অবসান ঘটাতে বড় ভূমিকা নেবে।আসলে এটা ছিল রাজ্যের অবিজেপি মনোভাবাপন্ন মানুষের ভুল ধারনা।   বাংলা আর ত্রিপুরা যে এক নয়,সেটা অবশ্যই বুঝতে পারেননি তৃণমূল কংগ্রেসের বঙ্গ নেতৃত্ব।এবং তাদের কর্পোরেট ভোট সমীক্ষক সংস্থা আইপ্যাকের দন্ডমুন্ডের কর্তারা।
           রাজ্যের পুর ও নগর ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস ২৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এরপর আইপ্যাকের প্রতি তৃণমূল নেতৃত্বের আস্থা আরো বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তব অর্থে এই ২৩ শতাংশ ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্পোরেট ভোট সমীক্ষক সংস্থা আইপ্যাকের কোনো ভূমিকায় ছিল না। বলছে তৃণমূল কর্মীরা। তাদের বক্তব্য,রাজ্যের মানুষ বিজেপির প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে বিকল্প হিসাবে ভোট দিয়েছিল তৃণমূলকে। পুর ও নগর ভোটে প্রার্থী চয়নের ক্ষেত্রেও বড় ব্লান্ডার করেছিল আইপ্যাক। শুধু তাই নয় পরবর্তী সময়ে প্রদেশ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও আইপ্যাকের রিপোর্ট ছিল ভুলে ভরা। অভিযোগ তৃণমূল নেতা কর্মীদের। তাদের তৈরী করা রাজ্য কমিটি ছিলো চূড়ান্ত ফ্লপ। বাস্তবের সঙ্গে কোন মিলই ছিল না। তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে।
           তৃণমূল কর্মীদের ভাষায়, দলের প্রথম সারির কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে বসে আইপ্যাক চার কেন্দ্রের প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করেছিলো। উপ ভোটে তৃণমূলের প্রত্যেক প্রার্থীর জামানত হয় জব্দ।
  তখনই তৃণমূলের ভোট সমীক্ষক সংস্থা আইপ্যাকের মুখ ও মুখোশ আলাদা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে এটা আরো স্পষ্ট হয়ে যায় দলের নেতা কর্মী সমর্থকদের কাছে। রাজ্য রাজনীতিতে চতুর্থবারের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের গঙ্গা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইপ্যাকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। রাজ্যের সাধারণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা তা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন।তারাও এখন হতাশার ঘোর অন্ধকারে। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী- সমর্থকরা এখন দোষারোপ করছে  আইপ্যাককে।তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ অংশে সত্য বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
          তৃণমূল অন্দরের খবর, সম্প্রতি ত্রিপুরায় কর্মরত আইপ্যাক টিমের দুই সদস্যকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলছে দলের একাংশ। সুস্মিতা দাস ও রাজদ্বীপ নামে এক যুবক এই মুহূর্তে ত্রিপুরাতে আইপ্যাকের হরতা-কর্তা-  বিধাতা। তাদের রাজনৈতিক গভীরতা  নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কর্মীরা। কর্মীদের কথায়, এই দুই কর্মীর কারণেই আজ তৃণমূল কংগ্রেসের এই অবস্থা। সঙ্গে অবশ্যই দায়ী রয়েছেন প্রদেশের শীর্ষ নেতৃত্ব। আইপ্যাকের দুই কর্মী সুস্মিতা দাস ও রাজদ্বীপের নামে নানান কটুক্তি চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য, আইপ্যাকের সুস্মিতা- রাজদ্বীপরা কাজ করছে অর্থের বিনিময়ে। তারা তৃণমূল কংগ্রেস থেকে প্রতিমাসে ঘুর পথে পাচ্ছেন মোটা অংকের টাকা(বেতন)।তাই নিজেদের চাকরি বাঁচাতে তারা রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের আবেগ নিয়ে এখনো করছে ছেলে খেলা। বাংলার শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে এরা প্রতিমুহূর্তে দিচ্ছেন ভুল রিপোর্ট। এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ সুস্মিতা দেব রাজ্য রাজনীতি নিয়ে তেমন কিছু জানেন না। তার আগে এই দলে ছিলেন সুবল ভৌমিক। কিন্তু তিনিও আইপ্যাকের সঙ্গে টায়াপে ছিলেন।তাই সুবল নিজের চেয়ার বাঁচাতে আইপ্যাকের ভুল রিপোর্টগুলিকে মেনে নিয়েছেন। এরফলে উপভোটে  ঢাকি শুদ্ধ বিসর্জন হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। এবং শেষে এটা বুঝতে পেরেই সুবলকে নামিয়ে দেওয়া হয় সভাপতির পদ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *