প্রদ্যুত কিশোর ও অমিত শাহ(ফাইল ছবি)

* অভিজিৎ ঘোষ *
—————————
দুয়ারে কড়া নাড়ছে ২৩-র বিধানসভা ভোট। তার আগে অবশ্যই সেমিফাইনাল হবে চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন।
২৩-র মহারণে টার্গেট পয়েন্টে আছে প্রদ্যুত কিশোরের তিপ্রামথা। বিশেষ ভাবে শাসক দল বিজেপি ও বিরোধী কংগ্রেস তিপ্রামথাকে নিজেদের মতো করে আগলে রাখছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা এক কদম এগিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন,”ভোটের আগেই তিপ্রামথার সঙ্গে লিখিত চুক্তি যেতেও কোনো আপত্তি নেই।” শাসক দল বিজেপিও তিপ্রামথাকে তোয়াজ করেই কথা বলছে। গেরুয়া নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত তিপ্রামথাকে সরাসরি আক্রমণে যাননি। মথার সুপ্রিমো প্রদ্যুত কিশোরও “সাংবিধানিক সমাধানে”র কথা বলে নরমে-গরমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রদ্যুতের ‘সাংবিধানিক সমাধান’ করতে পারে একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারই, এটা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে রাজ্যের মানুষ। তাহলে কোন দিকে গড়াচ্ছে জল? তক্কে তক্কে নজর রাখছে রাজনৈতিক মহল।

ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের নতুন সমীকরণের ছক কষে তিপ্রামথার নেতৃত্ব ইতিমধ্যে দৌঁড় ঝাঁপ শুরু করেছে দেশের রাজধানীতে। তারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে।কিন্তু এখন অমিত শাহের পক্ষ থেকে কোনো সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি। দাবি, বিজেপি নেতৃত্বের।
দিল্লির খবর অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ইতিমধ্যে দিল্লিতে অবস্থান করছেন তিপ্রামথার নেতৃত্ব।তাদের সঙ্গে আছেন বেশ কয়েকজন আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি নেতাও। যারা এই মুহূর্তে মথার ছত্র ছায়ায় আছেন।
তিপ্রামথার নেতৃত্বের দাবি, গোটা ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। প্রদ্যুত কিশোরের নির্দেশেই মথা নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অমিত চিঠি দিয়েছেন আলোচনার জন্য। কিন্তু বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মথার নেতৃত্বের সাক্ষাৎ পর্বে ব্যাঘাত ঘটে।

তিপ্রামথার নেতা তথা প্রাক্তন বৈরী নেতা অনন্ত দেববর্মা।

রাজ্য বিজেপি’র জনজাতি মোর্চার এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, তিপ্রামথার নেতৃত্ব দিল্লিতে অবস্থান করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। কিন্তু হালে পানি পাচ্ছে না। তারা বাধ্য হয়ে প্রদেশ বিজেপি’র সহ-সভাপতি তথা সাংসদ রেবতী ত্রিপুরার দ্বারস্থ হয়েছিলো। এই ইস্যুতে রেবতী ত্রিপুরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন তিপ্রামথার প্রথম সারির নেতা তথা প্রাক্তন জঙ্গি নেতা অনন্ত দেববর্মা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দেওয়া চিঠির কপিও সাংসদ রেবতী ত্রিপুরার কাছে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু রেবতী ত্রিপুরাও মথার নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেননি। তিনি অনন্ত দেববর্মার সঙ্গে সাক্ষাতই করেন নি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মথার নেতৃত্বের চিঠি চালাচালি বিষয়ের সত্যতা জানার জন্য “জনতার মশাল”র পক্ষ থেকে সাংসদ রেবতী ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে,তিনি তাতে সিলমোহর দেন। সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা বলেন,” তিপ্রামথার নেতা অনন্ত দেববর্মা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে পাঠানো চিঠির কপি দিয়েছেন তাঁকেও। এর বিস্তারিত তিনি বলতে নারাজ।
বিজেপি’র জনজাতি নেতৃত্বের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ভোট বাজারে প্রেসার পলিটিক্স করতে চাইছে তিপ্রামথা। এবং অমিত শাহকে দেবে ‘সিট শেয়ারিংয়ে’র প্রস্তাব। এমনকি তারা ভোটের মুখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রকারন্তে জঙ্গি জুজু দেখিয়ে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা অবনতির ইঙ্গিতও দিতে পারে। বিজেপি’র জনজাতি নেতৃত্বের ভাষায়, “সবটাই হবে মথার নেতৃত্বের ফাঁকা আওয়াজ।

সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা।

এই ইস্যুতে তিপ্রামথার নেতা তথা প্রদ্যুত কিশোরের ওএসডি রাজেশ্বর দেববর্মা বলেন, “অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য মথার কোনো নেতৃত্ব দিল্লিতে অবস্থান করেননি। সাক্ষাতের সময় চেয়ে অমিত শাহকে চিঠি দিতেই পারে দল।” রাজেশ্বর এটাও স্পস্ট করেন, তিপ্রামথার পক্ষ থেকে অমিত শাহকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কিনা তাঁর জানা নেই।তবে এডিসি প্রশাসন দিতেও পারে।

রাজনীতিকরা বলছেন, তিপ্রামথাকে নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব এখনো তাদের স্ট্যান্ড পয়েন্ট পরিষ্কার করতে পারছে না। গেরুয়া শিবিরের একাংশ নেতা প্রদ্যুত কিশোরের তিপ্রামথাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।তাদের যুক্তি আঞ্চলিক দলকে বার বার বিশ্বাস করে ঠকেছে জনজাতিরা। নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় চলছে ২৩-র ভোটে মথা কোনো ‘ফ্যাক্টর’ হবে না।

প্রদ্যুত কিশোরের ওএসডি রাজেশ্বর দেববর্মা।

কিন্তু বিজেপি’র অপর অংশের নেতা তিপ্রামথাকে যথেষ্ট সমীহ করছেন।কারণ অনেকগুলি সাধারণ আসনে জনজাতি ভোট “ফ্যাক্টর”। তাই তিপ্রামথার সঙ্গে অনুনয়-বিননয়ের নীতিকে তাঁরা প্রাধান্য দিতে চাইছে। সব মিলিয়ে ২৩-র ভোট যুদ্ধে বিজেপি-তিপ্রামথার মধ্যে যে গোপন “তরঙ্গ” বইছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *