আগরতলা, ২৪ মার্চ।।
   বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের সাপ্তাহিক সংস্কৃতি হাটের প্রথম তিন মাসে ১৪ তম রবিবার ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত হয়েছে। রবিবার অর্থাৎ ২৪ মার্চ সংস্কৃতি হাটে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঋতুরাজ বসন্তকে কেন্দ্র করে বসন্ত উৎসব “রঙ ফাগুনে বসন্ত”। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের  রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নান্নু।
গৌরবময় বাংলা সংস্কৃতির উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধির জন্য দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করছে “বাংলা সংস্কৃতি বলয়”। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি অন্যান্য ভাষাভাষি মানুষের বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী নৃগোষ্ঠীর মানুষজনের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মানের আসনে রাখে এই বাংলা সংস্কৃতি বলয়। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে বিনোদনের পাশাপাশি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, জীবনযাত্রা, কর্মশৈলী ইত্যাদির বিষয়ে অর্থাৎ আমাদের সমাজের সেকাল থেকে একাল পর্যন্ত সম্যক ধারণা সৃষ্টি করে সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলা সংস্কৃতি বলয়। সুতরাং কাজকর্মের নিরিখে বাংলা সংস্কৃতি বলয় শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন নয়, এইটি একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের বহুবিধ কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে আগরতলা সংসদ ইতিমধ্যেই নন্দননগর ব্রিজ সংলগ্ন ঠান্ডা কালীবাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে সেনপাড়া মাঠে “সাপ্তাহিক সংস্কৃতি হাট” শুরু করেছে। প্রতি রবিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাট বসে। বিগত ১০ই ডিসেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মানিক সাহা এই সাপ্তাহিক সংস্কৃতি হাট উদ্বোধন করেছিলেন। এরপর থেকে বিভিন্ন রবিবারে মন্ত্রী টিংকু রায়, উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়, মেয়র দীপক মজুমদার, বিধায়ক রতন চক্রবর্তী, সচিব প্রদীপ চক্রবর্তী, সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী, বাংলাদেশের সহকারি হাই কমিশনার আরিফ মোহাম্মদ প্রমুখরা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি হাটের ধারণার সাথে বাংলার বিভিন্ন পরব ও উৎসবগুলোর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এক অভিনব ধ্যানধারণায় গড়ে উঠেছে এই সাপ্তাহিক সংস্কৃতি হাট। এই সংস্কৃতি হাটে যেমন ভাবে বাংলা সংস্কৃতি ও নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারার গান নাচ-গান-চিত্রকর্ম-নটিক পরিবেশনা-সাহিত্য চর্চা ইত্যাদি থাকে তেমনি সার্বিকভাবে সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে আমাদের খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, আসবাবপত্র, গ্রামীণ খেলাধুলা ইত্যাদিও উপস্থাপিত হয়। সঠিকভাবে বলা চলে সংস্কৃতি চর্চার পূণ্যভূমি হিসেবে প্রথম তিন মাসেই পরিগনিত হয়েছে এই সাপ্তাহিক সংস্কৃতি হাট।


বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের আগরতলা সংসদের আশু লক্ষ্য:-

#প্রাথমিকভাবে আগরতলা শহরের বিয়ের অনুষ্ঠান সহ জন্মদিন প্রতিপালন, বিবাহ বার্ষিকী প্রতিপালন, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে বাংলার ধামাইল, ঝুমুর, বিয়ের গীত’ ইত্যাদি চর্চা হউক।

# দুর্গাপূজার মন্ডপ, দশমী যাত্রা, অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ডিজে বর্জন করে চর্চা হোক ঝুমুর, বাউল, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, হজাগিরি, ও আধুনিক সৃজনশীল বাংলা গান।

# সরস্বতী পূজায় স্কুলগুলোতে কিংবা সামাজিক সংস্থায় নন্দিত হোক ঝুমুর, ধামাইলসহ আমাদের সংস্কৃতি।

# প্রতিটি ক্লাব ও সামাজিক সংস্থার বাংলার সংস্কৃতির চর্চার জন্য বিশেষ টিম বা উপকমিটি বা শাখা গঠন করে রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী, শারদীয়া সম্মিলনী ইত্যাদি প্রতিপালন করলে সার্বিকভাবে সমৃদ্ধ হবে বাংলা সংস্কৃতি। স্থান বিশেষে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষদের বসবাসকারীর অঞ্চলগুলোতে নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা হওয়া বাঞ্ছনীয়।

এই সকল প্রাথমিক লক্ষ্য বাস্তবানের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতিতে নবপর্যায়ের জাগরণ সৃষ্টি করার জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে সকল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজকর্মী, ছাত্রশিক্ষক, সাধারণ মানুষ সহ আগরতলা শহর ও শহর সংলগ্ন প্রতিটি ক্লাব, সামাজিক সংস্থা সাংস্কৃতিক সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের কাছে বিনীত আবেদন রাখছে বাংলা সংস্কৃতি বলয়।
রবিবার  সংস্কৃতি হাটে অনুষ্ঠিত হয়েছে “বসন্ত উৎসব”। এই বসন্ত উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের রাজ্যপাল নাল্লু ইন্দ্রসেনা রেড্ডি। এই বসন্ত উৎসবে এবং পরবর্তী রবিবার গুলোতে সকল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজসচেতক নাগরিক, লেখক, চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব, ছাত্রছাত্রী, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সকল সাংস্কৃতিক স্কুল সহ সকল অংশের নাগরিক এবং সকল ক্লাব-সামাজিক সংস্থার সকল কার্যকর্তা, পূজা কমিটির কার্যকর্তা, সাংস্কৃতিক শাখার কর্মকর্তাদের উপরোক্ত সাপ্তাহিক সংস্কৃতি হাটে উপস্থিত হতে সবিনয় আমন্ত্রণ জানিয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *