।।রাজকুমার মালাকার (নীল শার্ট)ও তার সঙ্গী গণেশ চক্রবর্ত্তী (কালো শার্ট)।।

ডেস্ক রিপোর্টার, ১৩জানুয়ারী।।

      “স্বপ্নবেচার গ্রামে আমি স্বপ্নদেখি সারাক্ষণ..
        স্বপ্নবেচার গ্রামে আমি স্বপ্নদেখি অগণিত,
              স্বপ্ন পরখ করে দেখবি?
         দামি স্বপ্ন দেখতেও লাগে টাকা …।”

সত্যিই স্বপ্ন দেখতে টাকাও লাগেই। আর এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা যদি হন কোনো  মধ্যবিত্ত, বেড়ে যায় তার যন্ত্রণাও! তারপরও স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রতীক্ষা নিয়ে  কাজ করে চলেন মধ্যবিত্তরাই। এটাই চিরন্তন সত্য। ত্রিপুরাতেও মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নেওয়া স্বপ্নের এক ফেরিওয়ালা তার অভিনব আবিষ্কারের মাধ্যমে চমকে দিয়েছেন বিজ্ঞান প্রাজ্ঞ লোকজনকে।


ধলাই জেলার কমলপুর মহকুমার প্রত্যন্ত গ্রাম মরাছড়া। এই প্রান্তিক গ্রামের বাসিন্দা রাজকুমার মালাকার(৩০)। সে কলাবিভাগের ছাত্র। দরিদ্র পান  বিক্রেতার সন্তান রাজকুমার মালাকার বায়ুচালিত একটি ইঞ্জিন তৈরি করেছেন। যার পোশাকি নাম “বায়ুমান”(Bayumaan)।  “২০০৮ থেকে এই অভিনব ইঞ্জিন তৈরীর  কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন রাজকুমার। তাকে এই কাজে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছিলেন প্রতিবেশী গণেশ চক্রবর্তী।” অকৃপণ ভাবে গণেশ চক্রবর্তীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একথা বলেছেন “বিস্ময়” বাঙালি যুবক রাজকুমার।
          

।।বায়ুমান ইঞ্জিন”(Bayumaan)।।

কলা বিভাগের ছাত্র রাজকুমার জানিয়েছেন,
২০১৭ থেকে গণেশ চক্রবর্ত্তী তার সঙ্গে জড়িত।
তারা  প্রতিদিন ৮-১২ ঘন্টা সময় ব্যয় করেছেন “বায়ুমান”(Bayumaan) ইঞ্জিনটি তৈরী করতে।


বিজ্ঞান সম্মত  ব্যাখা দিয়ে রাজকুমার মালাকার “বায়ুমান”(Bayumaan) ইঞ্জিনটির বিশেষত্ব জানিয়ে বলেছেন —

# বায়ুমান ইঞ্জিনে বাতাস কখনও শেষ হবে না।(কোনো যন্ত্রাংশ খারাপ না হলে।)

# “বায়ুমান” ইঞ্জিনের শক্তি পেট্রোল,
ডিজেল চালিত ইঞ্জিন থেকে বহুগুণ বেশি

বায়ুমান ইঞ্জিন পরিবেশকে রাখবে দূষণ মুক্ত।

# ইঞ্জিনটি দিয়ে সল্প ব্যয়ে হাজার হাজার
মেগা ওয়ার্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

# ইঞ্জিনের উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে  ইলেকট্রনিক হিটার চালানো সম্ভব। খরচ থাকবে সাধ্যের মধ্যে।

# ছোট – বড় সব ধরনের গাড়ি চালানো
সম্ভব বায়ুমান ( Bayumaan) ইঞ্জিনের মাধ্যমে।

# চালানো যাবে রেল, জাহাজও ।

# বায়ুমান ইঞ্জিনটি থার্মো ডাইমাডিক(Tharmo Dymadic)-র দ্বিতীয় সূত্রকে মান্যতা দেয় না ।


# এই ইঞ্জিন জেআরজি (JRG) ফর্মুলা দিয়ে চলে।

# জেআরজি (JRG)  ফর্মুলা বিজ্ঞানী রাজকুমারের তৈরী।

# এই  ফর্মুলায় কোনো ইঞ্জিন যে পরিমাণ শক্তি খরচ করবে। একই ভাবে সম পরিমাণ শক্তি উৎপন্নও করতে পারবে।

।।রাজকুমারের বাড়িতে বাঙালি সমাজের প্রতিনিধি।।

রাজকুমারের  ভাষ্য, বায়ুমান ইঞ্জিনটি তৈরী করতে ব্যয় হয়েছে মোট ১০লক্ষ টাকা।এখন তিনি দেখছেন আরো বড় স্বপ্ন। দুই চোখে দেখা এই স্বপ্ন সফল হলে তিনি তাক লাগিয়ে দেবেন গোটা বিশ্বকে। তাই এখন লক্ষ্য, বায়ু চালিত ইঞ্জিনের একটি গাড়ি তৈরি করে আগরতলা ও  কমলপুরে রোড শো করা। তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। আর এখানেই মধ্যবিত্ত রাজকুমারের স্বপ্ন সাকার হওয়ার ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। অগণিত স্বপ্ন দেখা রাজকুমারের কাছে এতো অর্থের সংস্থান নেই। তাই রাজ্যের মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন তিনি। “আর্থিক হার্ডেল” টপকাতে পারলে রাজকুমার তার পরীক্ষা লব্ধ “ফল” (আবিস্কার) গোটা বিশ্ব দরবারে  তুলে ধরতে পারবে বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

।।জনতার দরবারে রাজকুমারের সাহায্যের অর্জি।।

কমলপুরের মরাছড়ার পান বিক্রেতার ছেলে রাজকুমারের ইঞ্জিন আবিষ্কারের কথা জানতে পারেন বাঙালি সমাজের জন্য আত্মিক ভাবে কাজ করা লোকজন। তারা আবেগের তাড়নায় ছুটে গিয়েছিলেন রাজকুমারের কমলপুরস্থিত মরাছড়া বাড়িতে। কথা বলেছেন রাজকুমার ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
    


প্রতিনিধি দলটিতে ছিলেন ইতিহাস গবেষক ননীগোপাল দেবনাথ, প্রফেসর ড: রাজীব ঘোষ ও সিনিয়র সংবাদিক – সম্পাদক সুভাষ দাস।প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আর্থিক সহায়তা বাবদ রাজকুমারের হাতে ত্রিশ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন। রাজকুমারের স্বপ্নকে সাকার করতে বাঙালি সমাজ তার পাশে থাকবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বাঙালি সমাজের প্রতিনিধিদের পাশে পেয়ে রাজকুমার এখন তার দুই চোখে দেখা স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম শুরু করেছেন।
       

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *